ভালো ফল করেও দীর্ঘশ্বাস অদম্য মেধাবী ইমরানের
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর যখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ঘরে আনন্দ বইছে, তখন দুশ্চিন্তায় দীর্ঘশ্বাস ফেলছে অদম্য মেধাবী ইমরান আলী। সে এবার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
সম্প্রতি ইমরানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোরা একটি শোয়ার ঘরে দুটি বিছানা পাতা। একটিতে থাকে ইমরান। অন্যটিতে মা শামছুন নাহার ও কলেজপড়ুয়া একমাত্র বোন তাছকিনা খাতুন। ইমরান জানাল, ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। ওই স্বপ্নকে লালন করে অনেক কষ্টে সে একটুকু পথ এসেছে। এখন ভালো একটা কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা তার। তবে তার বাবা নেই। মায়ের আর্থিক সামর্থ্য নেই। তার বোন নীলফামারী সরকারি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। নিজের ও মায়ের দিনমজুরির অর্থে তিন সদস্যের এই পরিবারের খাওয়া-পরা এবং দুই ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ চলে।
চিকিৎসক হতে চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ইমরান বলে, ‘আমার বাবা চিকিৎসার অভাবে অল্প বয়সে মারা গেছেন। আমার বয়স তখন দুই বছর। মা অসুস্থ, মায়ের চিকিৎসা করাতে পারি না। এ জন্য আমি চিকিৎসক হয়ে আমাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু আমার মায়ের পক্ষে লেখাপড়ার খরচ জোগানো অসম্ভব। সহায় সম্বল বলতে শুধু ভিটাটুকু।’
ইমরানের মা শামছুন নাহার বলেন, ‘ছোটবেলায় ওদের বাবা মারা গেছে। ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের ভালো খাওয়াতে-পরাতে পারি না। বয়স বাড়ছে, আগের মতো কাজ করতে পারি না। আমি নিজে লেখাপড়া না জানলেও লেখাপড়ার কদর জানি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে ভালো মানুষ বানাতে চাই।’
প্রতিবেশী মোছা. কমলা আক্তার (৪০) বলেন, ‘পরিবারটি অসহায়। ছেলেমেয়ে দুটোই কষ্ট করে লেখাপড়া করছে, ভালো ফলও করছে। দেখে ভালো লেগে। সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, ছেলেটা খুবই মেধাবী ও সৎ। তার পরিবার সচ্ছল না। তাকে একটু সহযোগিতা দেওয়া গেলে সে অনেক ভালো করবে।