ভালো নেই যৌনপল্লির বাসিন্দারা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লি করোনার শুরুতেই অবরুদ্ধ (লকডাউন) করে দেয় প্রশাসন। তখন খদ্দেরের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় চার মাস পর পল্লি খুললেও মানুষ তেমন যাচ্ছে না। এ কারণে পল্লিতে বসবাসরত যৌনকর্মী, বাড়িওয়ালা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
যৌনকর্মীদের নিয়ে গঠিত অবহেলিত নারী ঐক্য সংগঠনের সভানেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, ‘এ পল্লিতে প্রায় ১ হাজার ৩৫০ যৌনকর্মী ও ২০০ জনের মতো বাড়িওয়ালি আছেন। লকডাউন শুরু হলে আড়াই মাস সংগঠনের পক্ষ থেকে বাড়িভাড়া বন্ধ করেছিলাম। এখন অনেকটা শিথিল হওয়ায় সবাই আগের মতো ভাড়া দিচ্ছেন। তবে মানুষের আনাগোনা স্বাভাবিক না হওয়ায় সবাই ভালো নেই।’
পল্লির বাসিন্দারা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে পুলিশ গত ২০ মার্চ পল্লি লকডাউন করে। এ সময় পল্লির প্রধান প্রবেশপথ ছাড়া চারপাশের বিভিন্ন পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, বাইরের কেউ পল্লিতে ঢুকতে এবং কেউ পল্লি থেকে বের হতে পারবেন না। এতে যৌনকর্মীসহ পল্লির দেড় হাজার বাসিন্দা বিপাকে পড়েন। লকডাউনের পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন সময় যৌনকর্মীদের খাদ্যসহায়তা দিতে থাকে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এক যৌনকর্মী (৩৫) বলেন, ‘প্রায় এক যুগ ধরে এ পল্লিতে বাস করি। এমন কষ্ট আগে করিনি। প্রতিদিন ৪০০ টাকার রুম, খাওয়াসহ প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা প্রয়োজন। লকডাউন থাকায় খদ্দের আসা বন্ধ। সরকারি বা এনজিও সাহায্য দিলেও কদিন চলে? পরে ঘরভাড়া অর্ধেক করলেও আয় না থাকায় কষ্টে দিতে হচ্ছে। এমনও গেছে, দুই দিন না খেয়ে থাকছি। বাধ্য হয়ে পরিচিত খদ্দেরদের থেকে বিকাশে অগ্রিম টাকা নিয়েছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানুষ হালকা আসতে থাকে। এখন কোনো দিন ৫০০ টাকা আয় হয়, কোনো দিন তা-ও হয় না।’
কাজী সিরাজ খাবার হোটেলের তদারককারী আবদুস সালাম বলেন, আগে প্রতিদিন বেচাবিক্রি শেষে প্রায় তিন-চার হাজার টাকা থাকত। বর্তমানে পরিস্থিতি এত খারাপ যে দিন শেষে এক হাজার টাকাও থাকে না। করোনার কারণে মানুষজন তেমন আসে না। কেউ এলেও বেশিক্ষণ দেরি না করে দ্রুত চলে যায়। অনেকে হোটেলে খেতেও ভয় পায়।
জানতে চাইলে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, পল্লিতে অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে লকডাউন করা হয়। এ সময় ৯ দফা খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। কোরবানির ঈদে প্রথমবার তাঁদের মাংস দেওয়া হয়। বর্তমানে তাঁরা অনেকটাই স্বাভাবিক আছেন।