ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদী ও হাওরে বাড়ছে পানি। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার সুরমা নদীর ইব্রাহিমপুর ঘাটে।
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় জেলার তিনটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। ঢলের পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় দুই দিন ধরে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে সুনামগঞ্জের এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। এতে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদরে ১৭৫ এবং জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় এলাকায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২২১ মিলিমিটার। যে কারণে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে। এতে জেলার সদর, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বুধবার বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সুরমা নদীর পানি রাতেই বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করছেন পাউবোর কর্মকর্তারা। পৌর শহরের বড়পাড়া, নবীনগর ও তেঘরিয়া এলাকার সুরমা নদীর তীর উপচে পানি প্রবেশ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় উজানের ঢল নেমে প্রথমেই এই তিন উপজেলায় আঘাত হানে। রোববার থেকে উজানের পাহাড়ি ঢল নামা শুরু করে। এতে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা, আনোয়ারপুর ও দুর্গাপুর এলাকায় সড়ক প্লাবিত হয়। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আনোয়ারপুর ও দুর্গাপুর এলাকায় প্লাবিত হওয়া অংশ কোনোরকমে পারাপার হতে পারলে শক্তিয়ারখলা অংশে মানুষজনকে পারাপার হতে হচ্ছে খেয়া নৌকা দিয়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন। এ ছাড়া উপজেলার শ্রীপুর, বালিজুড়ি ও আনোয়ারপুর বাজারে ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বাড়ছে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়। উপজেলার তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হওয়ায় ওই সড়ক দিয়েও যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদী ও হাওরে বাড়ছে পানি। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীর তেঘরিয়া ঘাট থেকে বুধবার দুপুরে তোল।
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, ‘বৃষ্টি তো থামছে না। যেভাবে পাহাড়ি ঢল নামছে এবং ভারী বৃষ্টি হচ্ছে এভাবে চললে দু-এক দিনের মধ্যে বন্যা হয়ে যাবে।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বর্মণ জানান, এলাকার নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বৃষ্টি না থামলে পানি আরও বাড়বে। আর যদি বৃষ্টি হয়, একই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলও নামে, তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, ‘সুনামগঞ্জে বন্যা হওয়ার আগেই আমার উপজেলার মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে সড়ক প্লাবিত হয়ে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুই দিন ধরে আমরা বিচ্ছিন্ন আছি।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, আরও দুই থেকে তিন দিন এভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে পাহাড়ি ঢল নামছে। সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। এভাবে বৃষ্টি ও ঢল নামা অব্যাহত থাকলে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসনের কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামার কারণেই মূলত সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পানি বাড়ছে। বিশেষ করে তাহিরপুর উপজেলার কিছু কিছু সড়ক প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনো কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে।