ভাঙন–আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন গঙ্গাচড়ার তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা

উজানে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন–আতঙ্কে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ গ্রামের সাজু মিয়া বাঁধে আশ্রয়ের জন্য ঘর তুলছেন। শুক্রবার উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের আনুমানিক দুই হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, নোহালী, গজঘণ্টাসহ পাঁচ ইউনিয়নের চরাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করে। সেই সঙ্গে পানির তোড়ে নদীভাঙনও দেখা দেয়।

আরও পড়ুন

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চরইশরকুল, ইছলি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি, শংকরদহ, বাগেরহাটসহ ছয়টি গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাঙন–আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদীভাঙনের কারণে কিছু কিছু পরিবারকে বসতভিটা অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

শংকরদহ গ্রামের মশিউর রহমান ও রোকসানা বেগম দম্পতি বসতভিটার টিনের ঘরসহ বাড়ির আসবাব নৌকায় করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। মশিউর প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর বান (বন্যা) যখন বেশি হইবে, তখন আর দিগ্‌বিদিক পাওয়া যাবার নয়। যেভাবে নদীর পানির স্রোত দেখা যাইতেছে, তাতে আবাদি জমি ভাঙি গেইছে। বসতভিটাও যায় যায় অবস্থা হইছে। সেই জন্য ঘরবাড়ি ভাঙিয়া দূরের মহিপুর গ্রামোত যাইতোছি।’

আরও পড়ুন

একই গ্রামের অলি সরদারের ২০ শতাংশ আবাদি জমি গত ২৪ ঘণ্টায় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটাও রক্ষা হচ্ছে না। তিনিও আজ সকালে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি বলেন, ‘মনে করছিনু এবার বান (বন্যা) হবার নয়। কিন্তু যেভাবে আকাশের গর্জন, তাতে ভয় হইতোছে। বান খুব জোরেশোরে হইবে। রাইতোত নদীর ডাক শুনিয়া ভয় হইছে। সারা রাত জাগি থাকা লাগছে।’

একই গ্রামের রমানাথ কান্তের এক বিঘা আবাদি জমি এক দিনের ব্যবধানে নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। রঞ্জিত কুমারের ৫০ শতাংশ, আমিনুর রহমানের ৩০ শতাংশ আবাদি জমি গতকাল রাতেই নদীতে বিলীন হয়েছে। বসতভিটাও বিলীন হওয়ার উপক্রম। তাই সকাল সকাল ঘরবাড়ি ভেঙে শুকনো স্থানে বাঁধের ওপর ঠাঁই নিয়েছেন তাঁরা।

রংপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামে বন্যায় পানিবন্দী বাদল রায় গবাদি পশু নিয়ে বাঁধের ওপর পলিথিনের শামিয়ানা টাঙিয়ে দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

বাঁধের ওপর নতুন করে বসত গড়তে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে দেখা যায়। শংকরদহ গ্রামের সাজু মিয়া পরিবার নিয়ে বাঁধের ওপর ঘর নির্মাণ করতে করতে বলেন, ‘হামার জীবনটায় ভাঙা–গড়া। প্রতিবছরই চলে এমন যুদ্ধ। এমন করিয়া বছরের পর বছর ধরি হামার জীবন কাটি যাইতোছে।’

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, উজানের পানি ধেয়ে আসছে। তাঁর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ছয়টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তবে মাইকে আগাম প্রচার চালানোর কারণে মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

এদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুরসহ চার গ্রামের কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে শুকনো জায়গায় ছুটে গেছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নেও অনেকে পানিবন্দী হয়েছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় আজ দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এটি রাতে আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানির স্রোতের কারণে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।