ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির কমিটি নিয়ে উত্তেজনা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কমিটি গঠন নিয়ে জেলা, কয়েকটি উপজেলা ও পৌর বিএনপিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠন, আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও বিবাহিতদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। কমিটি থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের ১৯ জন পদত্যাগ করেছেন। জেলার কসবা, আখাউড়া ও সরাইলে এসব কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়ার সড়ক বাজারে দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর লিখিত বক্তব্যে ১৩ মার্চের মধ্যে কমিটি বাতিল না হলে কিংবা এ বিষয়ে কোনো ধরনের আশ্বাস না পেলে কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি বিএনপির পাল্টা কমিটি গঠনের কথাও জানানো হয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে শাহজাহান সিরাজকে আহ্বায়ক ও হাবিবুর রহমানকে সদস্যসচিব করে ৩১ সদস্যের আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সম্প্রতি কসবা উপজেলা ও পৌর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ২১ সদস্যের সরাইল উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জিল্লুর রহমান টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের দিয়ে আশুগঞ্জ, আখাউড়া ও কসবা উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সরাইল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি থেকে পৃথক লিখিতপত্রের মাধ্যমে ১৪ জন নেতা একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। আর ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলা জামে মসজিদ রোডে প্রতিবাদ সভা করে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে পাঁচজন সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
আশুগঞ্জে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগকারী নেতারা হলেন নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সদ্য বিলুপ্ত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাদেকুর রহমান, সহসভাপতি মিজানুর রহমান খান, সহসভাপতি ও উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আলমগীর কবির, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ খা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর আলম। দ্রুত তৃণমূল থেকে পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আশুগঞ্জ জামে মসজিদ রোডের প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান অবৈধ সুবিধা নিয়ে নবগঠিত আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটির ঘোষণা করেছেন। নবগঠিত কমিটিতে বিভিন্ন পদে যাঁদের রাখা হয়েছে তাঁদের বেশির ভাগ পদধারীরই নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নেই। এ ছাড়া যাঁরা দীর্ঘদিন দলের জন্য বিভিন্ন মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং দলের পেছনে শ্রম দিয়েছেন, তাদের এই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি। বক্তারা অবিলম্বে নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে কসবা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানান সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। বিএনপির নেতারা সেখানেও বলেন, অর্থের বিনিময়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ও বিএনপির কোনো কমিটিতে কোনো পদে না থাকা কবির হোসেনের যোগসাজশে কসবা উপজেলা ও পৌর বিএনপির যোগ্য, সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৮ মার্চের মধ্যে ওই কমিটি বাতিল করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
ওই সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকলিল আজম বলেন, কবির হোসেন বিএনপির কেউ নন। তাঁর ছোট ভাই আরাফাত সানি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী। ছোট ভাইয়ের প্রভাব দেখিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে অর্থের বিনিময়ে উপজেলা ও পৌর বিএনপির যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি ও জনবিচ্ছিন্ন লোক দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়ার সংবাদ সম্মেলনে নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আরাফাতের ভাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কবির আহমেদ আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
সরাইল উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করা মোস্তাকিমুর রহমান বলেন, ‘যাঁকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। পুলিশের ওপর হামলার দায়ে করা মামলার পলাতক আসামি, থাকেন ঢাকায়। এ ছাড়া তাঁর ছাত্রত্বও নেই, আমরা তাঁর নেতৃত্ব মানি না। আমরা এ কমিটির ১৪ জন পদত্যাগ করেছি। আরও দুজন পদত্যাগ করবে।’
পাশাপাশি সরাইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়েও দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কমিটি গঠনের পর থেকেই তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে আসছেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পুলিশ মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুই পক্ষের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে নবগঠিত কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার ১১ দিনের মধ্যে উপজেলার সব কটি (৯টি) ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবারের মহাসড়কে কর্মসূচি পালন করার ঘটনায় পুলিশ মাঠে নামে। পুলিশ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালায়। রাতে গ্রেপ্তার করে কমিটির ২৪ নম্বর সদস্য মো. জাকারিয়া (৪৫) ও প্রতিপক্ষের এলেম মিয়াকে (৩৫)। জাকারিয়া উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া আর এলাম মিয়া গুনারা গ্রামের বাসিন্দা।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন,‘আইনশৃঙ্খলার অবনিতর আশঙ্কায় ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ (বুধবার) বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। কাউকে আইনশৃঙ্খলা-পরিপন্থী কাজ করতে দেওয়া হবে না।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার মন তো জয় করা যাবে না। টাকার অভিযোগ সত্য নয়। বাংলাদেশে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা অনেক সহজ। এসব হিংসাত্মক কথা। আমার বিরুদ্ধে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। কমিটি ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন তাদের আপত্তির বিষয়ে তারা কেন্দ্রকে জানাবে। আর কেন্দ্রীয় বিএনপি সব পর্যবেক্ষণ করছে।’