জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাবনার ঈশ্বরদীতে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। লিচু এই এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল। সেই সঙ্গে এ বছর লিচুগাছে প্রচুর মুকুলও এসেছিল। বাম্পার ফলনের আশায় ছিলেন চাষিরা। কিন্তু লিচুর গুটি ঝরে পড়ায় তাঁরা এখন ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। লিচুর গুটি ঝরে যাওয়ায় লিচু উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বুধবার দুপুরে উপজেলার ছলিমপুর ও সাহাপুর ইউনিয়নের ১০-১২ জন লিচুচাষির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি মুকুল আসায় লিচুর ভালো ফলন হবে বলে ভীষণ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু সাত-আট দিন ধরে এখানকার আবহাওয়া গুমোট হয়ে আছে। প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝোড়োবাতাস। লিচুগাছগুলো সূর্যের পর্যাপ্ত তাপ পাচ্ছে না। ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। এসব ভুক্তভোগী চাষির ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার কারণেই গাছ থেকে গুটিগুলো ঝরে পড়ছে।
উপজেলার ছলিমপুরের মিরকামারি পূর্বপাড়া গ্রামের লিচুচাষি এম এম ইমরান বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক ধরে মেঘলা আকাশ। লিচুর জন্য যে পর্যাপ্ত রোদ দরকার, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই তাঁর বাগানের ৪৮টি লিচুগাছের অধিকাংশ গুটি ঝরে যাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন চাষি ইমরান। তিনি আরও বলেন, ভিটামিনজাতীয় ওষুধ স্প্রে করেও গুটি ঝরা ঠেকানো যাচ্ছে না।
সাহাপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ওয়ারেছ ফকির বলেন, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছের মধ্যে ৭৫টি গাছে লিচুর গুটি দেখা দিয়েছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে গাছগুলোর গুটি ঝরে পড়ছে। কী কারণে ঝরে পড়ছে, তা অবশ্য তিনি বুঝতে পারছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিন দশক ধরে এই উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ হচ্ছে। অনেক লিচুবাগান হয়েছে। বর্তমানে এই উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হচ্ছে। লিচু এই এলাকার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। মৌসুমে লিচুর ফলন নির্ভর করে মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পরিচর্যার ওপর। গতবারের তুলনায় এবার গাছে অনেক বেশি মুকুল আসে। গাছে গাছে লিচুর গুটি দেখা দিয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ গাছ থেকেই গুটি ঝরে পড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা। এ কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন লিচুচাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক দিন ধরে এখানে ঝড়বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এদিকে লিচুর গুটির গোড়া খুব নরম। ঝোড়ো বাতাস এসে লিচুগাছে আঘাত করলে এসব গুটির গোড়া আরও নাজুক হয়ে পড়ে। দু–এক দিন পরে সেই গুটি ঝরে পড়তে থাকে। তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য উপজেলার লিচুচাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লিচুগাছে দুই গ্রাম বোরন ও চার গ্রাম করে পটাশ সার ছিটাতে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে ব্লক সুপারভাইজাররা এসব পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।