সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন হয় প্রতি মাসের ৬ থেকে ৮ তারিখের মধ্যে। চলতি মাসের বেতনের নির্ধারিত দিনের দুই দিন আগে গত শনিবার রাতে ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যাতে প্রাণ গেছে ৪৬ জনের, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। স্মরণকালের মধ্যে দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের ঘটনায় ডিপোর সব কার্যক্রম থেমে গেছে। ফলে ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারীরা এখনো গত মাসের বেতন পাননি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হবে।
ডিপোর বেশ কয়েকজন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রথম আলোর এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গত মাসের বেতন নিয়ে তাঁরা এখন দুশ্চিন্তা করছেন না। কোনোভাবে মাস কাটিয়ে দিতে পারবেন। তাঁদের চিন্তা, ডিপোটি কবে নাগাদ খুলবে। ডিপো চালু হতে যত দেরি হবে, তাঁদেরও কাজে ফিরতে তত দেরি হবে। তখন অসুবিধায় পড়বেন তাঁরা।
শ্রমিকেরা জানান, ডিপোতে কাজ করা বেশির ভাগ লোক ঠিকাদারের অধীন কাজ করতেন। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের বেশির ভাগই দুর্ঘটনার পর বাড়ি চলে গেছেন। যাঁরা কোম্পানির অধীন চাকরি করছেন, তাঁরাই কেবল ডিপো এলাকায় আছেন। কারণ, যেকোনো মুহূর্তে কর্তৃপক্ষ তাঁদের ডাকতে পারে।
শনিবার রাতে বিস্ফোরণে আহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবদুল সাত্তার। সেদিন তাঁর ডিউটি ছিল না। আগুন লাগার খবর শুনে ডিপোতে আগুন নেভাতে যান তিনি। এরপর বিস্ফোরণে আহত হন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গতকাল বুধবার তিনি ডিপো এলাকায় আসেন। সেখানে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আট বছর ধরে এই ডিপোতে তিনি কাজ করছেন। কখনো বেতন ৮ তারিখের পরিবর্তে ৯ তারিখ হয়নি। এবার কোম্পানির এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল, তাঁরা সময়মতো বেতন পাবেন এ চিন্তা তাই করছেন না। তিনি পাঁচ সন্তানের বাবা। ডিপোর চাকরির বেতনেই তাঁর সংসার চলে।
ডিপোর দক্ষিণ পাশে স্টাফ কোয়ার্টারে দেখা হয় আইসিডি (কনটেইনার ডেসপাস) বিভাগের সহকারী ইনচার্জ আবদুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এত বড় দুর্ঘটনার পর সময়মতো বেতন যে পাবেন না, এটি তাঁরা জানেন। এ দুর্ঘটনায় তাঁর কক্ষে থাকা এক সহকর্মী মারা গেছেন। স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে পানির কল থেকে পানি নিচ্ছিলেন সিনিয়র মেকানিক্যাল ওয়েল্ডার সুজিত দেব। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে এই ডিপোতে চাকরি করছেন তিনি। কোম্পানির বেতন কখনো নির্ধারিত সময়ের পর হয়নি। দুর্ঘটনা না ঘটলে এবারও দেরি হত না।
ডিপো শ্রমিক আবদুল বারেক বলেন, তিনি ঠিকাদারের অধীন কাজ করেন। প্রতি মাসে কাজ করতে পারলে তাঁর বেতন হয়, কাজ না করলে হয় না। এখন কাজ হচ্ছে না, সে কারণে এ মাসের বেতন না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। কিন্তু গত মাসে যে কয় দিন কাজ করেছেন, সেটির বেতন পেয়ে যাবেন বলে তাঁর আশা।
বিএম ডিপোর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন দিয়ে দেয়। ৮ তারিখে বেতন দেওয়া হয়েছে এমন মাসের সংখ্যা খুবই কম। এই মাসের বেতন বিল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা। সব কাগজপত্র এলোমেলো হয়ে গেছে। সবার ব্যাংক একাউন্ট নম্বরসহ বেতন বিলের কপি খুঁজে বের করে আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা বেতন দিয়ে দেবেন। কাগজপত্র গুছিয়ে ব্যাংকে টাকা দিতে না পারলে সরাসরি ক্যাশ টাকা পরিশোধ করা হবে।