বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ শুরু

রাজশাহী জেলা

রাজশাহীর বাগমারায় কৃষকদের তিন ফসলি জমিতে অবশেষে বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। কিছুদিন বিরতি দেওয়ার পর গত শুক্রবার (১৮ মার্চ) কাজ শুরু করা হয়। জমির মালিকদের অভিযোগ, তাঁদের জমির মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। তাঁরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও পুলিশের লোকজন দিয়ে এ জমি দখলে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর কৃষকদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে বিদ্যুতের ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ১৫ বিঘা জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংথদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড।

জমির মালিকদের অধিগ্রহণের টাকা না পেলে লিখিতভাবে আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফারুক সুফিয়ান, ইউএনও, বাগমারা

এ বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার মুঠোফোনে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টির কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে।

কৃষকেরা বলেন, তাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হলেও তাঁরা টাকা পাননি। ১ মার্চ বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্রের জমি দখল করতে মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসলাম আলী ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রেজাউল হকের নেতৃত্বে ৩০-৪০টি মোটরসাইকেল নিয়ে উপকেন্দ্রের নির্ধারিত স্থানে যান। তাঁরা সেখানে উপকেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করে দেওয়ার ও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় খবর পেয়ে স্থানীয় সূর্য্যপাড়া, পিদ্দপড়া, গোয়ালপাড়া এলাকার শতাধিক কৃষক ও নারী জমিতে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হন।

ওই দিন ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাদী হয়ে ৩৬ জন কৃষকের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় কৃষকদের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে কৃষকদের পক্ষে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

কৃষকেরা বলেন, মামলা করার পর পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। গ্রেপ্তারের ভয়ে সূর্য্যপাড়া, পিদ্দপড়া, গোয়ালপাড়া এলাকার পুরুষেরা এলাকাছাড়া হন। এর মধ্যে ১৬ জন কৃষক আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। মামলা করার পর ৪ মার্চ দুপুরে ঠিকাদারের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে জমিটি দখল করেন। তাঁরা স্থানীয়ভাবে চেয়ারম্যানের লোক হিসেবে পরিচিত। এ সময় পুলিশের গাড়িও তাঁদের আশপাশে ছিল। অনেক কৃষক দখলের দৃশ্য দেখলেও প্রতিবাদ বা বাধা দিতে পারেননি।

ওই দিন শুধু জমি ঘিরে রেখে দখলে নেওয়া হলেও পরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ১২ দিন পর গত শুক্রবার আবার কাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় ১৫ জন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে তাঁরা পলাতক। যাঁরা আসামি নেই, তাঁদের অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন আশঙ্কা থেকে তাঁরা দখলকারীদের বাধা দিতে পারেনি। তাঁরা উচ্চ আদালতে তাঁদের তিন ফসলি জমিতে প্রকল্প না করার দাবিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করেছেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে এর জবাব চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই দখল করে কাজটি করা হচ্ছে।

বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব। মামলার তদন্ত এবং আসামি গ্রেপ্তারর জন্য পুলিশ বিভিন্ন জায়গাতে টহল দিচ্ছে। পুলিশের পাহারায় কোনো কাজ হয়নি।

বাগমারার ইউএনও ফারুক সুফিয়ান জানান, আদালতের নোটিশের একটি কপি আইনজীবীর মাধ্যমে পেয়েছেন। তবে এটা দাপ্তরিকভাবে না আসার কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। জমির মালিকদের অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, কেউ টাকা না পেলে লিখিতভাবে আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে।