বিটুমিন পোড়ানোর গন্ধে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দিঘলকান্দি দাখিল মাদ্রাসা মাঠে এক মাস ধরে রাস্তার কাজের জন্য বিটুমিন পুড়িয়ে গলানো ও পাথর মেশানোর কাজ চলছে। এতে বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলাবালু ও বিটুমিন (পিচ) গলানোর দুর্গন্ধে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। একই সঙ্গে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তাঁরা।
এলাকাবাসী জানান, এক মাস ধরে ঠিকাদার আবদুল আজিজ খাকসা গ্রামের তেঁতুলতলা থেকে দিঘলকান্দি লেউতির মোড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য মাঠে নির্মাণসামগ্রী রেখেছেন। ইতিমধ্যে রাস্তার কাজ শেষ হলেও মাঠ থেকে সরঞ্জাম সরানো হয়নি। বরং সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের উপশহরের রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। একটানা কাজ করায় বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলাবালু ছড়িয়ে পড়ছে মাঠসংলগ্ন আশপাশের বাজার ও এলাকায়। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দিঘলকান্দি দাখিল মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে বালু ও পাথর স্তূপ করা। বারান্দায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে চুলায় জ্বাল দেওয়ার ঝুট কাপড়। মাঠে চুলা তৈরি করে পিচ গলানোসহ মিক্সচার মেশিনে পিচের সঙ্গে পাথর–বালু মেশানো হচ্ছে। চুলা ও মিক্সচার মেশিনের কালো ধোঁয়াসহ বালু ও ছাই উড়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত নাকে–মুখে ঢুকছে সেসব ধোঁয়া ও বালু। এ সময় বাচ্চাদের নিয়ে আশপাশের নারীদের বাড়ি ছেড়ে দূরে অবস্থান করতে দেখা যায়।
দিঘলকান্দি গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘সারাক্ষণ বাতাসের সঙ্গে বালু উড়ে এসে ঘরের জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড় ও খাবারের ওপর পড়ছে। নাকে–মুখে ধোঁয়া ও বালু ঢুকে বাচ্চারা অসুখে ভুগছে। দিঘলকান্দি বাজারের চা বিক্রেতা আজমত আলী বলেন, করোনার কারণে বাজারে এমনিতেই লোকজন কম, দুই সপ্তাহ ধরে এ সমস্যার কারণে দোকানে লোকজনই আসছে না। কী যে বিপদে আছি, বলে বোঝানো যাবে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হবি বলেন, ‘পিচ পোড়ানোর গন্ধে বমি বমি ভাব আর মাথা ঘোরানোসহ ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত পারি না।’ আবদুল আজিজ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বালুতে মসজিদের মেঝে ভরে থাকে, আর ধোঁয়ায় থাকা যায় না। এ জন্য মসজিদেও লোকজন আসছে না।’ ক্রীড়ামোদী তরুণ রনি আহম্মেদ বলেন, ‘আগে আমরা মাঠে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু প্রায় এক মাস ধরে খেলা বন্ধ। বিকেলে এখন অলস সময় কাটাই।’
দিঘলকান্দি মাদ্রাসা সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসা বন্ধ, কিন্তু মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখার আগে আমার কাছ থেকে কেউ কোনো অনুমতি নেয়নি।’
পাশেই অবস্থিত খোকসা বি এম কলেজ। কলেজটির অধ্যক্ষ সরোয়ার হোসেন বিপ্লব জানান, কলেজ বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা। কিন্তু বালু ও ছাই উড়ে এসে কাগজপত্র সব নোংরা হয়ে যাচ্ছে, বিষাক্ত ধোঁয়ায় কলেজে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঠিকাদার আবদুল আজিজের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মাঠের কাজের তদারকিতে থাকা তাঁর ব্যবস্থাপক মানিক হোসেন বলেন, ‘লোকজনের অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে পারছি। কিন্তু কিছু করার নেই।’