বাবাকে খুঁজছিল আর কেঁদে উঠছিল ছোট্ট ফারিয়া
মায়ের কোলে কিছুক্ষণ পরপরই কেঁদে উঠছিল ১৮ মাস বয়সী ছোট্ট ফারিয়া। বাড়িভর্তি মানুষ। স্বজনদের আহাজারি। কী হয়েছে, বুঝতে না পারলেও বাবাকে অনেকক্ষণ না দেখার ব্যাকুলতা শিশুটির চোখেমুখে। মায়ের আদরও শান্ত করতে পারছে না তাকে। চারদিকে তাকিয়ে বাবার মুখ খুঁজছিল শিশুটি।
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্য করার জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে নিহত হন ফারিয়ার বাবা মো. ফারুক (২৬)। গতকাল শনিবার রাত ১১টায় গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আড়াল দক্ষিণগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ফারুক ওই গ্রামের মো. আলমের ছেলে। পেশায় তিনি একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। স্থানীয় মো. নাঈম ও মো. রবিন তাঁর সঙ্গে ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে নিহত ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকের মাতম চলছে। ফারুকের বাবা মো. আলম বাড়ির উঠানে বসে ছেলের জন্য আহাজারি করছেন। তাঁর মা ঘরের ভেতর বিলাপ করছেন আর ছেলের স্মৃতি মনে করছেন। ঘরের বারান্দায় একমাত্র সন্তান ফারিয়াকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ফারুকের স্ত্রী মোছা. নুরজাহান। শিশুটি একটু পরপর অস্ফুট স্বরে ‘বাবা, বাবা’ বলে ডাকছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেও তার কান্না থামাতে পারছিলেন না মা।
নুরজাহান প্রথম আলোকে জানান, পাশের এলাকায় ওয়াজ শুনে বাড়িতে ফিরছিলেন ফারুক। এ সময় আড়াল দক্ষিণগাঁও গ্রামে মসজিদের পাশের সড়কে হট্টগোল দেখে সেখানে এগিয়ে যান। গিয়ে দেখতে পান রবিন ও নাঈমকে কয়েকজন লোক এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করছেন। এ সময় ফারুক বাধা দিতে গেলে তাঁকেও ছুরিকাঘাত করা হয়।
নুরজাহান বলেন, ‘এইহানে কী অইছে, জিগানোর লগে লগে তাঁরে কুপায়া মাইরা ফেলছে। এক লোক বাড়িত খবর জানাইছে। গিয়া দেহি তিনজন তিন জায়গায় পইড়া রইছে।’ স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে উঠছিলেন তিনি। বলছিলেন, ‘এখন আমরার কী অইবো! সব তো শেষ হইয়া গেল!’
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, শীতলক্ষ্যা নদীর নরসিংদীর মনোহরদী পার এলাকার একজন ফেসবুকে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেন। শীতলক্ষ্যা নদীর অপর পারে গাজীপুরের কাপাসিয়া প্রান্তের আড়াল দক্ষিণগাঁও গ্রামের কয়েক যুবক সেই পোস্টের বিরোধিতা করে সেখানে কমেন্ট করেন। এর জেরে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাপাসিয়ার আড়াল দক্ষিণগাঁও গ্রামের এমপিএম অ্যাপারেলস কারখানার পাশে দুই পক্ষের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে মনোহরদী থেকে আসা ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র দল ফারুক, নাঈম, রবিনসহ ৭–১০ জনকে ছুরিকাঘাত করে। উদ্ধার করে তাঁদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে নাঈম ও ফারুকের মৃত্যু হয়। আহত আরও দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে আজ সকালে মৃত্যু হয় রবিনের।