বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত মুহিত
সিলেটে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় কবরস্থানের পাশে ও সড়কে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় জমান।
এর আগে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে দুপুর সোয়া ২টার দিকে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন আল্লামা মুহিবুল হক গাছবাড়ি। জানাজায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সিলেটের বিভিন্ন আসনের সাংসদ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শেষে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে মুহিতের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে লাশবাহী গাড়ি কবরস্থানে পৌঁছায়। পরে বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীর কবরের পাশে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এর আগে দুপুর ১২টায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের মরদেহবাহী গাড়ি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায়। সেখানে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনারে লাশ পৌঁছানোর পরে তাঁর প্রতি সশস্ত্র সম্মাননা জানানো হয়। সেখানে মুহিতকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মুহিতের মরদেহবাহী ফ্রিজার ভ্যান সিলেটের পথে রওনা দেয়। রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরের হাফিজ কমপ্লেক্সে এসে পৌঁছায় গাড়িটি। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা মরদেহ গ্রহণ করেন।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। শনিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে সাবেক অর্থমন্ত্রীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মরদেহ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে দাফনের জন্য মরদেহ মুহিতের জন্মস্থান সিলেটে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে সাবেক অর্থমন্ত্রীর মৃত্যুতে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ দুই দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে শনি ও রোববার আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের ধোপাদীঘিরপাড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান মুহিত। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ছাত্রজীবনে তিনি সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। সিএসপিতে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্ব নেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে।