বাউফলে মন্দিরে কোরআন শরিফ রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার
পটুয়াখালীর বাউফলে একটি মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে পালিয়ে যাচ্ছিলেন মো. ইদ্রিস (৫৫) নামের এক ব্যক্তি। পরে তাঁকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। উপজেলার বগা ইউনিয়নের উত্তর পালপাড়া গ্রামে গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননা আইনে মামলা দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ইদ্রিসের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর পালপাড়া গ্রামের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের অদূরে দিলীপ পালের বাড়িতে তিন দিন ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান চলছিল। বুধবার ছিল অনুষ্ঠানের শেষ দিন। ওই দিন রাত তিনটার দিকে অনুষ্ঠান চলাকালীন ইদ্রিস নামের ওই ব্যক্তি হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। ওই সময় শুকরঞ্জন বৈরাগী নামের এক পুরোহিতের বাধার মুখে ওই ব্যক্তি চলে যান। ওই রাতেই অনুষ্ঠান শেষে সঞ্জয় পাল (৩৪), সজল পাল (৩০) ও কার্তিক পাল (৩৫) নামের তিন ব্যক্তি বাড়িতে ফেরার পথে রাত সাড়ে তিনটার দিকে দেখতে পান পাশের কালীমাতা মন্দির থেকে ওই ব্যক্তি বের হচ্ছেন।
সঞ্জয় পাল বলেন, গভীর রাতে মন্দির থেকে ওই ব্যক্তিকে বের হতে দেখে তাঁর কাছে মন্দিরে ঢোকার কারণ জানতে চাইলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন ইদ্রিস। পরে তাঁদের ডাক–চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ইদ্রিসকে আটক করে ফেলেন। পরে তাঁরা দেখতে পান মন্দিরের কালীমাতা প্রতিমার সামনে ঘটের ওপর একটি ব্যাগ রাখা। ওই ব্যাগ খুলে দেখতে পান কোরআন শরিফ। একপর্যায়ে ইদ্রিস কোরআন শরিফ রাখার কথা স্বীকার করেন। পরে পুলিশে খবর দিলে ভোররাত চারটার দিকে পুলিশ গিয়ে ইদ্রিসকে আটক করে বাউফল থানায় নিয়ে যায়।
উত্তর পালপাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি দিলীপ পাল বলেন, ‘ভাগ্য ভালো যে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। তা না হলে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারত। তখন এর দায় কে নিত? এমন ঘটনা ওই ব্যক্তি কেন এবং কী উদ্দেশ্যে করেছেন, তা প্রশাসনের অধিকতর তদন্ত করে বের করতে হবে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ বাউফল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অতুল চন্দ্র পাল বলেন, ‘আমরা উপজেলা নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই ব্যক্তির বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া গ্রামে। তিনি দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া এলাকার কদমতলা আবাসনে থাকেন। তাঁর এক স্বজন জানিয়েছেন, ইদ্রিস মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। এরপরও এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ধর্মীয় অবমাননা আইনের ধারায় মামলা করেছে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা পর বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। মন্দির এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।