বাংলাদেশে এসে মুগ্ধ তাঁরা
কেউ ঢুকে পড়েছেন পশু হাসপাতালে। চোখ রাখছেন পশুদের কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তার দিকে। কেউবা ঢুঁ মারছেন গ্রন্থাগারে। ঘেঁটে ঘেঁটে দেখছেন নানা বই। কেউবা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সবুজে মোড়ানো ক্যাম্পাসের এখানে-ওখানে। এভাবেই চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ক্যাম্পাসে পাওয়া গেল ১২ ভিনদেশি শিক্ষার্থীকে। তাঁরা সবাই ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার (ইউপিএম) ভেটেরিনারি অনুষদে পড়েন।
সিভাসুর সঙ্গে ইউপিএমর চুক্তি অনুযায়ী এই শিক্ষার্থীরা ১৫ দিনের এক্সটার্নশিপ করতে গত ২৩ জুন বাংলাদেশে এসেছিলেন। ইউপিএমর শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো সিভাসুতে এসেছেন। তবে সিভাসুর শিক্ষার্থীরা তিন বছর ধরে ইউপিএমে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণ নিতে।
বাংলাদেশে আসার পর গত ২৩ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থিত সিভাসুর টিচিং অ্যান্ড ট্রেনিং পেট হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টারে অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা আসেন চট্টগ্রামের সিভাসুর মূল ক্যাম্পাসে। ৪ জুলাই পর্যন্ত তাঁরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডেইরি, পোলট্রি ও প্রোডাকশন ফার্ম ঘুরে দেখেন। এরপর তাঁরা যান কক্সবাজারে। গত শনিবার পর্যন্ত সেখানে অবস্থিত সিভাসুর গবেষণাকেন্দ্রে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরেন।
এই শিক্ষার্থীরা হলেন ইলিয়াস হানাফি বিন রাজালি, পুত্রি সাবরীনা সুলাইমান, নুর আজমিনা বিনতে আহমেদ, আদিলাহ নাজিহা বিনতে রাজালি, জুলাইকা বিনতে মোহাম্মদ সুফি, লুকমান বিন আবদুল সামাদ, মোহাম্মদ আজমি বিন আবদুল হালিম, নুর ফাজলিনা বিনতে ইতম আহমদ, আমাল নাজমি ইজুদ্দিন, নুরুল নাওয়া বিনতে বুরহানউদ্দিন, জাকিরা ওয়ারনিস বিনতে জাহির ও আজাইলিনা বিনতে ফজলি।
এই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, তাঁরা বাংলাদেশ ও সিভাসুর সবকিছুতে মুগ্ধ। জানার আগ্রহও প্রবল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শতভাগ শিক্ষার্থী বিদেশে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাচ্ছে। ইন্টার্নশিপ করার সময় শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার খরচ একেবারেই ফ্রি। তবে বিমানভাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যয় করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া ফি থেকে ১০ হাজার টাকা ওই শিক্ষার্থীর নামে জমা রাখি। ইন্টার্নশিপ করতে যাওয়ার সময় সেই টাকা তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এতে দেখা যায় তার ওপর তেমন চাপই পড়ছে না। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়া থেকেও শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্নশিপ করতে আসছে।’
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। এই শিক্ষার্থীরা সিভাসুর পশু হাসপাতালে নানা রকম পশুকে চিকিৎসা করাতে আনতে দেখে বিস্মিত হন। তাঁরা বলেন, ব্যস্ততম শহরের কারণে তাঁদের ক্যাম্পাসের হাসপাতালে গরুর মতো বড় পশুগুলোকে হাসপাতালে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এখানে দেখছি খুব সহজেই পশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। তাই এখানে এসে অনেক পশুকে চিকিৎসা দেওয়ার চিত্র দেখতে পেলাম। এটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’
বাংলাদেশ ও সিভাসু নিয়েও মুগ্ধতার কথা জানালেন এই শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের একজন ইলিয়াস হানাফি বিন রাজালি বলেন, ‘সিভাসুতে এসে মনে হচ্ছে, নিজের দেশেই আছি। এখানকার আতিথেয়তা থেকে শুরু করে সবকিছুতে মুগ্ধ।’ তিনি বলেন, ‘এখানে সহানুভূতি ও খুবই যত্নসহকারে প্রাণীদের চিকিৎসা করা হয়—যা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখানে এসে যা শিখলাম তা নিঃসন্দেহে ভেটেরিনারি পেশায় আমার ক্যারিয়ার গঠনে ভূমিকা রাখবে।’ একই কথা বলেন, আদিলাহ নাজিহা বিনতে রাজালি। তিনি আরও বলেন, এখানকার খাবার আর মানুষেরাও অসাধারণ।
১২ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনকে দেখা গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে ঘুরছেন দিব্যি। এই রহস্য জানতে চাইলে সহাস্য তাঁরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমর্থক। আর এখন বিশ্বকাপের মৌসুম। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালোও খেলেছে। এখনই তো লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাখার সেরা সময়।’