বাঁশখালীতে কারণ ছাড়াই গুলি ছোড়া হয়েছে, অভিযোগ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের ওপর কারণ ছাড়াই গুলি ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, গন্ডামারার ঘটনায় পুলিশের মুখ বন্ধ আছে। তাদের সঙ্গে ঘটনার দিন হেলমেট বাহিনী ছিল। তারা কারণ ছাড়া গুলি ছুড়েছে। এ ঘটনায় বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।
আজ রোববার বিকেলে তিনি বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুলিতে নিহত মাহমুদ রেজার বাড়িতে সাংবাদিকদের এসব বলেন। সেখানে তিনি নিহতের মা, ভাই ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ, নিহত ব্যক্তিরা বেঁচে থাকলে আরও ৪০ বছর কাজ করতে পারতেন। তিনি নিহত শ্রমিকদের জন্য পেনশনও দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্লিপ্ততায় ২০১৬ সাল থেকে প্রকল্পটিতে এ রকম খুনের ঘটনা শুরু হলেও সরকার যত্নবান ছিল না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফত, রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক হাসনাত কাইউম প্রমুখ।
এর আগে বেলা আড়াইটায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান সমন্বয়কারী (চিফ কো–অর্ডিনেটর) ফারুক আহমেদ ও বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবিরের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফটকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব পুলিশ জনগণের শত্রু নয়, সরকার যে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে, চাপটা পুলিশের ওপরও আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত, তারা কথা বলতে রাজি নয়।
এদিকে দুপুরে গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশাপাশি ২০০ পরিবারের কাছে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। উপজেলার চাম্বল, শীলকূপ, বাংলাবাজার ও বড়ঘোনা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে এসব বিতরণ করা হয়।
১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর গন্ডামারায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে সাত শ্রমিক নিহত হন। আহত হন তিন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকলে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর পৃথক দুটি মামলায় সাড়ে তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে।