বসন্ত আর ভ্যালেন্টাইন এসেছে ফুলে ফুলে
‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়...।’ প্রকৃতিতে বসন্তের আবির্ভাব কবিগুরুর এই গানের চরণে প্রকাশিত। কিন্তু নগরজীবনে বসন্তের আবির্ভাব এভাবে বোঝা যায় কদাচিৎ। তবে বসন্তের প্রথম দিনে ফুলের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় আর তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসে সবাই এ বার্তা পায় যে ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’
আজ পয়লা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন। একই সঙ্গে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস-উৎসবের দু-দুটি উপলক্ষ একই দিনে পড়ায় আজ শুক্রবার তারুণ্যের ঢল নামবে শহর থেকে গ্রামে। এ দুটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে গাজীপুর মহানগরও সেজেছে নতুন সাজে। বিশেষ করে নগরীর ফুলের দোকানগুলো বাহারি ফুলের সমাহারে ভরে উঠেছে। ফুলের রূপ ও সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। তার সঙ্গে রয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
আগের বছরগুলোতে এ দুটি দিবস এক দিন আগে–পরে আসত। আগের দিন, অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি বাসন্তী রঙে রঙিন হয়ে যেত পুরো নগরী। এক দিন পর, অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার রং লাল ছড়িয়ে পড়ত নগরীতে। বসন্ত এমনিতেই ভালোবাসার ঋতু। আজ ভালোবাসার দু-দুটি দিবসে ফুল দেওয়া–নেওয়ার মধ্য দিয়ে চলবে ভালোবাসার আদান-প্রদান। লাল-হলুদ-বেগুনি গোলাপ, ডালিয়া,ডায়ানথাস, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাঁদাসহ নানা ফুল শোভা পাবে মানুষের হাতে, কিশোরী-তরুণীদের খোঁপায় কিংবা মাথার টায়রায়।
দিবস দুটি ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই ফুলে ফুলে ভরে যেতে থাকে নগরীর ফুলবিতানগুলো। সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের রাজবাড়ি, শিববাড়ি বাসস্ট্যান্ড মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা, শিমুলতলী বাজার, জোড়পুকুর এলাকা, টঙ্গী বাজার তুরাগ নদের পাড়, কলেজগেটসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে ভাসমান ফুলের দোকান। প্রায় সব ধরনের ফুল রাখা হয়েছে দোকানগুলোতে। ভেতর ও বাইরে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কেউ কিনছেন, কেউ দেখছেন, আবার কেউবা বাহারি ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। এতে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়েছে ওই এলাকায়।
অর্কিড ফ্লাওয়ার হাউস নামের একটি দোকানের সামনে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। এর মধ্যে গাজীপুর আজিম উদ্দিন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুইটি আক্তার জানান, প্রতিবছরই পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের জন্য আলাদা করে ফুল কেনেন। কিন্তু এবার একসঙ্গেই কেনা হবে সব ফুল। আরেক শিক্ষার্থী সেনোভা হামিদ বলেন, সাধারণত বসন্তের প্রথম দিন একটু হলুদ শাড়ির সঙ্গে মাথায় হলুদ ফুল পরে ঘোরা হয়। এরপর ভালোবাসা দিবস যে যাঁর মতো করে উদ্যাপন করেন। কিন্তু এবার দিবস দুটিএকই সঙ্গে পড়ায় আনন্দ আর উদ্যাপন দ্বিগুণ কাজ করবে তাঁদের মনে।
তবে অনেককে গতকালই দেখা গেছে হলুদ শাড়ি ও মাথায় ফুলের টায়রা পরে ঘুরে বেড়াতে, ফুল কিনতে। এর মধ্যে টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় একটি ফুলের দোকানের সামনে কথা হয় লিজা আক্তার নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম, ভালোবাসা দিবসের আগের দিনই পয়লা ফাল্গুন। তাই বাসা থেকে সকাল সকাল হলুদ শাড়ি পরে বেরিয়েছিলাম। আমার মতো অনেকেই আজ পয়লা ফাল্গুন ভেবে বের হয়েছিল।’