বর্জ্যে ভরছে শুভাঢ্যা খাল

ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে শুভাঢ্যা খাল। ছবিটি গত বুধবার কেরানীগঞ্জের চরকালীগঞ্জ থেকে তোলা l প্রথম আলো
ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে শুভাঢ্যা খাল। ছবিটি গত বুধবার কেরানীগঞ্জের চরকালীগঞ্জ থেকে তোলা l প্রথম আলো

ময়লা-আবর্জনায় আবারও ভরে যাচ্ছে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল। এরই মধ্যে খালের তিন কিলোমিটার অংশে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, তাঁদের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। তা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পক্ষ থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে অন্যত্র ফেলার ব্যবস্থা নেওয়া হলেও মাঝেমধ্যে ময়লা সংগ্রহকারীরা না আসায় তাঁদের বিপাকে পড়তে হয়। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে রাতের আঁধারে খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন।

গত শুক্রবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর গুদারাঘাট, চরকালীগঞ্জ, নতুন শুভাঢ্যা, কদমতলী, চরকুতুব, গোলামবাজার, ঝাউবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খালের তীরে ময়লা-আবর্জনা ও তৈরি পোশাক কারখানার টুকরা কাপড় ফেলার কারণে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পূর্ব আগানগর গুদারাঘাট এলাকা থেকে শুভাঢ্যা কালীবাড়ি এলাকা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথ বাহিনী বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে কালীবাড়ি এলাকা পর্যন্ত শুভাঢ্যা খালের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও খাল খনন করায় সে সময় পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়। এরপর খালটি আবার দখল ও ভরাট হয়ে যেতে থাকে। ২০১২ সালের জুলাইয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যাগে খাল খনন করা হয়। কালীবাড়ি থেকে চরকালীগঞ্জ পর্যন্ত খালের তিন কিলোমিটার অংশ থেকে বর্জ্য অপসারণ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণের জন্য ২০১৪ সালে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় শুভাঢ্যা কালীবাড়ি এলাকায় খালের দুই তীরের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশ বাঁধানো হয়। এ ছাড়া গোলামবাজার থেকে চরকুতুব এলাকা পর্যন্ত খালের তলদেশের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও খনন করা হয়। তবে খালে ময়লা-আবর্জনা ও পোশাক কারখানার টুকরা কাপড় ফেলার কারণে খালটি আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

চরকালীগঞ্জ এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। মাঝেমধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসে ময়লা নিয়ে যায়। তারা যেদিন না আসে, সেদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলতে সমস্যা হয়।’

গোলামবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রহিছ উদ্দিন মিয়া বলেন, কালীগঞ্জ বাজার ও গোলামবাজারের ময়লা প্রতিনিয়ত খালে ফেলা হয়। ময়লা ফেলার সুনির্দিষ্ট জায়গা থাকলে কেউ খালে ফেলতেন না।

কেরানীগঞ্জ পোশাক ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল আজিজ শেখ বলেন, খালে যাতে পোশাকশিল্পের ময়লা-আবর্জনা ফেলা না হয়, সে জন্য সমিতির পক্ষ থেকে কারখানার মালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, খালে যাতে ময়লা না ফেলা হয়, সে জন্য বাজার, বিপণিবিতান ও বাসাবাড়ির ময়লা তাঁদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা হয়। পরে এসব আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু রাতের আঁধারে খালের তীরবর্তী ও আশপাশের এলাকার লোকজন খালে ময়লা ফেলছেন।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই শুভাঢ্যা খাল দখল ও দূষণ করতে দেওয়া যাবে না। কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্য শুভাঢ্যা খাল রক্ষা করতে হবে।