পানি বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার
বরেন্দ্র অঞ্চলে যে পরিস্থিতি, এখনই পানিসংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে হবে
বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। পানির স্তর ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে। এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জাতীয় গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় কম হওয়ার কারণে পানির স্তর বর্ষা মৌসুমে আর আগের জায়গায় উঠে আসছে না। এর মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানি যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভয়াবহ খরাপ্রবণ এ এলাকার পানির সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ চৌধুরী সারওয়ার জাহানের সঙ্গে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: খাদ্যনিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বরেন্দ্র অঞ্চলে অধিক পরিমাণ ধান চাষ হচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: যে পরিমাণ পানি তোলা হচ্ছে, পরের বছর শূন্যস্থানটা সেই পরিমাণ পানিতে ভরছে?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: জাতীয় বৃষ্টিপাতের গড় ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটার। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার বা কোনো কোনো এলাকায় তারও কম বৃষ্টিপাত হয়। এ কারণে চাষাবাদের প্রয়োজনে যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, সেই পরিমাণ পানি আর বর্ষা মৌসুমে ওপরে উঠছে না। ফলে পানির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: পানিসংকট মোকাবিলায় সরকারের কী উদ্যোগ আছে?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: সাম্প্রতিক কালের পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) পানির নীতি ২০১৩ এবং পানিবিধি ২০১৮ বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে। কিন্তু পানির স্তর দ্রুত নিম্নগামী হচ্ছে। এ কারণে এ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা দরকার; যাতে আগামী ১০০ বছরের জন্য যে বেঙ্গল ডেলটা প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: জনসচেতনতা তৈরি করতে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: কৃষক নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিয়ে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা দরকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে কৃষকদের অভিযোজিত হওয়ার বিষয়টি শেখাতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানোর জন্য ক্রপস ডাইভারসিফিকেশনের কথা বলা হয়। সেটা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: দেশে পানিসংক্রান্ত ৫০টি আইন আছে। একেকটি সংস্থা নিজ নিজ সেক্টর থেকে কাজ করে। যেমন এনজিওরা বলে, তারা কৃষিক্ষেত্রে পানি নিয়ে কাজ করে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বলবে, তারা খাওয়ার পানি নিয়ে কাজ করে। সবকিছুর একটা সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। সেটি হচ্ছে না।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আমাদের করণীয় কী?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: বরেন্দ্র অঞ্চল ভয়াবহ পানিসংকট পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনই এ এলাকাকে পানিসংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার সুফলটা কী হবে?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: এ এলাকাকে পানিসংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হলে পানিনীতি বাস্তবায়িত হবে। সেই ক্ষেত্রে পানিনীতি অনুযায়ী খাওয়ার পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তারপর অন্যান্য ব্যবহারের প্রসঙ্গ আসবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ভূগর্ভস্থ পানির বিকল্প কিছু নিয়ে বলবেন?
চৌধুরী সারওয়ার জাহান: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে। সেটি চাষাবাদে ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে হবে।