বরিশালে শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে মেয়র অনুসারীদের হামলা-ভাঙচুর, আহত ১৫

প্রতিমন্ত্রী অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। রোববার দুপুরে বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল নগরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের আধিপত্য নেওয়াকে কেন্দ্রে করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী শ্রমিকেরা জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস-কোচ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার দুপুরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনা ঘটে।

হামলায় বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও তাঁর পক্ষের ১৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন শ্রমিক রফিকুল ইসলাম, রিজন হাওলাদার, শামীম হাওলাদার, বিপ্লব হাওলাদার, সালাম মিয়া, মিজানুর রহমান, মো. শাওন, ফারুক হোসেন। বাকি ছয়জনের পরিচয় জানা যায়নি।

সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করেন, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে এই হামলা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাঁরা কেউ হাসপাতালে ভর্তি হননি। তিনি বলেন, ‘রোববার দুপুরে আমি শ্রমিকদের নিয়ে ইউনিয়নের কার্যালয়ে বসা ছিলাম।আকস্মিকভাবে মেয়র অনুসারী কথিত শ্রমিকেরা দুই শতাধিক সশস্ত্র বহিরাগত নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় কার্যালয়ের চেয়ার, টেবিল, আলমারিসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর ছবিও ভাঙচুর করা হয়। এই হামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেয়।’

সুলতান আরও বলেন, ‘গুরুতর আহত হওয়া সত্ত্বেও আমরা কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারিনি। হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁরা আবার হামলা চালাতে পারে এই শঙ্কায় সবাই বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক শ্রমিক ইউনিয়ন দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সাংসদ জাহিদ ফারুকের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।

অভিযোগের বিষয়ে মেয়র অনুসারী বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের নিয়ে একটি মিছিল করে টার্মিনালে অবস্থান নিই। উল্টো আমাদের দুজনের ওপর হামলা চালিয়েছে সুলতান মাহমুদের লোকজন। এতে আমাদের দুজন কর্মী বিপু সিকদার ও কালাম হোসেন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’
এর আগে শনিবার দুপুরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে দুই পক্ষ অবস্থান নিলে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুপুর ও বিকেলে মেয়র অনুসারী শ্রমিকদের হামলায় প্রতিমন্ত্রী অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের সেলিম সিকদার ও লালু শরিফ নামে দুজন আহত হয়েছেন। আহত সেলিম সিকদার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লালু শরিফ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক দিন ধরেই প্রতিমন্ত্রী ও মেয়র অনুসারী শ্রমিকেরা বাসস্ট্যান্ডে দফায় দফায় মহড়া দিচ্ছিলেন। শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী সমর্থক দুজন শ্রমিকনেতাকে মারধর করা নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনা ছিল। রোববার দুপুর ১২টার দিকে দুই পক্ষ বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিলে আবার উত্তেজনা ছড়ায়। বেলা একটার দিকে হঠাৎ মেয়র সমর্থক শ্রমিকেরা বাসস্ট্যান্ডের পাশে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা চালান। এ সময় শ্রমিকনেতা সুলতান মাহমুদসহ অন্য শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতরের আসবাব ও অন্য মালামাল ভাঙচুর করা হয়েছে।

হামলায় আহত এক শ্রমিককে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যরা।রোববার দুপুরে বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ফলে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি। হামলার ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধী যে দলেরই হোক, অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

শ্রমিকদের একটি সূত্র জানায়, রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক শ্রমিক ইউনিয়ন দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সাংসদ জাহিদ ফারুকের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর আগে শ্রমিক ইউনিয়ন দখল নিয়ে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করে।

এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা মেয়রের অনুসারী কমিটিকে অবৈধ এবং নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। মেয়র অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবু নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অপর দিকে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তাঁদের ঘোষিত কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সুমন মোল্লা।