২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বরিশাল মহানগর বিএনপির পদবঞ্চিত নেতাদের আলাদা ইফতার আয়োজন

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠান। শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর স্ব রোডের একটি কমিউনিটি সেন্টার
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল মহানগর বিএনপির আাহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের আয়োজনে ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের স্ব রোডে একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ ইফতারের আয়োজন করেন তাঁরা। সেখানে ৩০টি ওয়ার্ডের বিলুপ্ত কমিটির নেতা–কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার ও দোয়ার আয়োজন করেছে মহানগর বিএনপি। এর এক দিন আগের এই ইফতার অনুষ্ঠানকে পাল্টা আয়োজন বলে মনে করছেন দলের নেতা–কর্মীদের একটি অংশ।

সম্প্রতি গঠিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা এত দিন প্রকাশ্যে পাল্টা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেননি। আড়াই মাস ধরে ঘরোয়াভাবে তাঁদের অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি নগরের ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরাও যুক্ত হয়েছেন পদবঞ্চিতদের সঙ্গে।

বাদ পড়া অংশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন আহ্বায়ক কমিটি দলের পরীক্ষিত ও তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে বিগত দিনে নিষ্ক্রিয়দের নিয়ে একটি পক্ষ দলে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চাইছে। এতে দলের অধিকাংশ নেতা–কর্মী হতাশ ও ক্ষুব্ধ। ফলে বাদ পড়া অংশটি সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠের রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। শিগগিরই তাঁরা নগরের রাজনীতিতে ভিন্নভাবে আবির্ভূত হতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে আজকের ইফতার ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

মহানগরের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছাত্রজীবন থেকে শ্রম দিয়ে দলকে শক্তিশালী করেছি। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের কারণে দলের বাইরে। আমরা বঞ্চিত নেতা–কর্মীদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছিলাম—যেখানে দলের অনেক ত্যাগী নেতা–কর্মী উপস্থিত হয়েছেন।’

এটা পাল্টা ইফতার আয়োজন কি না, জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমরা যেহেতু মহানগর বিএনপির ইফতারে দাওয়াত পাইনি। তাই বঞ্চিতরা একত্র হয়েছি। পাল্টা কিছু না।’

তিনি আও বলেন, ‘বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে। দল অবশ্যই সে অনুযায়ী চলার কথা। ৩০টি ওয়ার্ড কমিটির যে প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হলো, তাতে দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে হয়নি। আবার আমাদের বেছে বেছে আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হলো, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

বাদ পড়া নেতারা গত জানুয়ারি থেকে চা-চক্র, মিলাদ ও সড়কে শো ডাউন করে নিজেদের ক্ষোভ ও অবস্থান জানান দিচ্ছিলেন। এবার বড় পরিসরে তা দিলেন। দলের কয়েকজন নেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এ ইফতার অনুষ্ঠান মহানগর বিএনপির ইফতার আয়োজনের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেখছেন তাঁরা। এটি তাঁদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার একটি বড় কৌশল।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে মহানগরের নতুন কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদ পড়া নেতাদের ইফতারের আয়োজনটা ছিল ব্যক্তিগত। সেখানে আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। আর আমাদের দলীয় ইফতার অনুষ্ঠান শনিবার।’

এ বিষয়ে কথা হয় মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘দুইটা ইফতার মাহফিল আয়োজনের কথা শুনেছি। তবে কোনোটাতে আমি দাওয়াত পাইনি। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। স্থানীয় রাজনীতিতে আমি আপাতত চুপচাপ আছি।’

বরিশাল মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। কমিটিতে মনিরুজ্জামান খান ওরফে ফারুককে আহ্বায়ক, আলী হায়দার ওরফে বাবুলকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। এরপর গত ২২ জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে আগের কমিটির ১৭১ সদস্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি।

আরও পড়ুন

পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির জন্য কেন্দ্রে নাম জমা দেওয়ার পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন বিলুপ্ত কমিটির অন্তত ৩১ নেতা। তাঁরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তাঁদের আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি। লিখিত অভিযোগে নেতারা উল্লেখ করেছিলেন, পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির অর্ধেকের বেশি নেতা ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আর দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের শাসনকালে রাজপথে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁরা অংশ নেননি। নিষ্ক্রিয় এসব নেতার অনেকে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে মহানগর কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। সাংসদ, হুইপ ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে তাঁর শক্ত প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় অংশটি আহ্বায়ক কমিটি করতে এককাট্টা হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফল হন। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে সর্বশেষ বিএনপির মহানগর কমিটি দেওয়া হয়।

এদিকে মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চলা দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের মধ্যে গত ১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।