বন্যায় ১১০০ কোটি টাকার ক্ষতি

এটি প্রাথমিক ধারণা। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কলাগাছের ভেলায় করে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশ এলাকায়
আনিস মাহমুদ

বন্যার কারণে সিলেটে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর সুনামগঞ্জে ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগর ও জেলার ১৩টি উপজেলার সড়ক ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ খাতে প্রায় ৪০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও কৃষি খাতে ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গবাদিপশু–পাখি, খড়–ঘাসসহ এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকা।

একই সূত্রের তথ্যানুযায়ী, জেলার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ ডুবে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ কাজী মজিবর রহমান জানান, জেলায় ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো জমি, ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টর সবজিখেত নিমজ্জিত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর জানান, সিলেটে তাঁদের আওতাধীন ১২০টি রাস্তার ২৭৭ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাঁদের আওতাধীন ৭২ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর বাইরে আরও ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন খাত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মিলিয়ে নগর ও জেলায় অন্তত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধানের মূল্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পাকা ধান তলিয়েছে। এর মধ্যে দ্রুত পানি সরে যাওয়ায় কিছু জমির ধান কৃষকেরা কেটেছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবারের বন্যায় ১ হাজার ৩১০টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এসব পুকুরে ১৬৮ মেট্রিক টন মাছ ও ৫০ মেট্রিক টন পোনা ছিল। জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি। ছাতকে ৭৫০টি ও দোয়ারাবাজারে ৪৩৫টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারির সংখ্যা ১ হাজার ১৪৭।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের একটা তালিকা করেছি। এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। যদি কোনো সহযোগিতা আসে, সেটি খামারিরা পাবেন।’

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের। অনেক সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ২৭২ কিলোমিটার। জেলার সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের রামপুর এলাকার একটি পাকা সেতু বন্যার পানির তোড়ে সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। রাস্তাঘাটের ক্ষতি বেশি হয়েছে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায়। এখনো অনেক অভ্যন্তরীণ রাস্তা প্লাবিত।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেছেন, ‘আমাদের প্রায় ৯০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যায়নি।’

বন্যা পরিস্থিতি

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। ফলে বন্যার্তদের দুর্ভোগ রয়েই গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও। পাউবো সিলেট জানিয়েছে, সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে এখনো পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হয়নি। উজান থেকেও ঢল কম নেমেছে। তাই নদী ও হাওরে পানি কমছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানি নামছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে গেছেন।