বন্যায় গবাদিপশু নিয়ে ভোগান্তিতে মানুষ
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের বীর দক্ষিণ গ্রামের কৃষক ছোটন মিয়া (৩৫)। মাসখানেক আগে বাড়ির গোয়ালঘরে মাচা করে সেখানে ৪০ মণ শুকনা ধান রেখেছিলেন। তবে বন্যার পানিতে তাঁর গোয়ালঘর ও বসতঘরে পানি ঢুকেছে। তড়িঘড়ি করে কোনোরকমে ধান, গবাদিপশুগুলোকে পাশের একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় রেখেছেন।
একই ইউনিয়নের মাইজবাড়ী গ্রামের আলী আজগরের (৫৮) বাড়িতেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। কোনোরকমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভেতরে থাকলেও গবাদিপশুগুলোকে পাশের বিদ্যালয়ের বারান্দায় রেখেছেন।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মানুষ গবাদিপশুগুলোকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বন্যাকবলিত মানুষ কোনোরকমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করলেও গবাদিপশুদের নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে আসছে।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহখানেক ধরে থেমে থেমে চলা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে প্রবল বেগে নদ–নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। গতকাল রাত ৯টার মধ্যেই এ উপজেলার বেশির ভাগ সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই নিজ গ্রাম ছেড়ে পাশের বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলার মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা আলা উদ্দিন বলেন, যত সময় যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। উপজেলার মধ্যে মধ্যনগর বাজারটি সবচেয়ে বড় বাজার। এই বাজারের রাস্তাসহ সবস্থানেই এখন হাঁটুসমান পানি। এই বাজারের ধানের আড়তগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় হাজার হাজার মণ ধান বন্যার পানিতে নষ্ট হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য দ্রুত শুকনা খাবার ও ত্রাণ পাঠানোর জন্য দাবি জানান তিনি।
উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হামিদুল ইসলাম রতন বলেন, যেভাবে বন্যার পানি বাড়ছে, তাতে উপজেলার বেশির ভাগ মানুষকে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস বলেন, এ উপজেলায় ১৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮৫টি বিদ্যালয়ের ভেতরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানুষ গবাদিপশুগুলোকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোয় বন্যার্ত ব্যক্তিদের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ করা হয়েছিল। এখন মৌসুম শেষের দিকে। বন্যার পানিতে ১০ হেক্টর সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সালমুন হাসান বলেন, এ উপজেলায় ৭৩৭টি পুকুর রয়েছে। সব কটি পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগুলো খোলা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।