রাজশাহীর বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ সরকারি আদেশে বন্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আজ রোববার সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ মানববন্ধন করে সরকারি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তুলে কলেজ কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে মানববন্ধন চলাকালে কর্তৃপক্ষ বলেছে, কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারাবেন। তাই যেন কলেজটি চালু রাখার ব্যবস্থা করে সরকার।
রাজশাহী নগরের খড়খড়ি এলাকায় অবস্থিত ওই মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে কলেজটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। বর্তমানে এখানে ৭টি ব্যাচে প্রায় ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় কলেজটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পায়নি। এ কারণে এমবিবিএস পাস করা চারজন শিক্ষার্থী ইন্টার্নশিপ করতে না পেরে এক বছর বসে ছিলেন। এ অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কলেজ খোলা রাখা এবং বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের মার্চে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্তের ঘাটতিগুলো পূরণ করতে বলা হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারির পরিদর্শনে সেসব শর্তের একটিও বাস্তবায়ন পাওয়া যায়নি। এ কারণে ২ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে দুটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি দুটিতে বলা হয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১ (সংশোধিত) প্রতিপালন না করায় রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে কলেজটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অন্য বেসরকারি কলেজগুলোয় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। চিঠি দুটিতে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগের উপসচিব বদরুন নাহার সই করেছেন।
কলেজ বন্ধের ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে আজ বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে শাহ মখদুম কলেজের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন। এতে সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হয়েছেন। তাঁদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটি খোলা হয়েছিল; সার্টিফিকেট বিক্রির কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে যেন আর না গড়ে ওঠে। প্রতারণার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তাঁরা সন্তানদের চিকিৎসক বানানোর স্বপ্নে প্রচুর টাকা দিয়ে শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে পড়াশোনাই হয় না। শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখতে পারেন না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সঠিক। তবে তাঁদের সন্তানের জীবন যেন অনিশ্চিত না হয়ে পড়ে, সে জন্য দ্রুত অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ, শাকিলা দিল আফরোজ, রিয়াজুল হাসান, মেহেদী হাসান, অভিভাবক আবদুর রউফ খান, গোলাম ফারুক প্রমুখ।
একই সময় নগরের আলুপট্টি মোড়ে মানববন্ধন করে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান কলেজটির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে কলেজের আশপাশের কিছু লোকও অংশ নেন। এখানকার লোকজন বলেন, কলেজটি বন্ধ হয়ে গেলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারাবেন। অনেকেই অসহায় হয়ে পড়বেন। তাই কলেজটি চালু রাখার আহ্বান জানান তাঁরা।