বন্ধুকে ছাড় দিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী
শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে বন্ধু সুরঞ্জিত সরকারকে ছাড় দিয়েছেন তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুজ্জামান কামু। আজ সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে এ ছাড় দেন কামরুজ্জামান। ওই ওয়ার্ডে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুরঞ্জিত সরকারকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে নালিতাবাড়ীসহ সারা দেশের ৬৪টি পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নালিতাবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ২২ হাজার ৮৫। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৮৭২ জন এবং পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৬১৩ জন।
সাবেক কাউন্সিলর কামরুজ্জামান শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর বন্ধু সুরঞ্জিত সরকার উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সুরঞ্জিত বর্তমানে পৌরসভার কাউন্সিলর হিসেবে প্যানেল মেয়রের দায়িত্বেও রয়েছেন।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা সাবেক কাউন্সিলর কামরুজ্জামান শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর বন্ধু সুরঞ্জিত সরকার উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সুরঞ্জিত বর্তমানে পৌরসভার কাউন্সিলর হিসেবে প্যানেল মেয়রের দায়িত্বেও রয়েছেন।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কামরুজ্জামান ২০০৫ সালে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। পরে ২০১০ সালে নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে কামরুজ্জামানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বন্ধু সুরঞ্জিত সরকার নির্বাচিত হন। পরে ২০১৫ সালের নির্বাচনে আবারও দুই বন্ধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে আবার সুরঞ্জিত সরকার বিজয়ী হন। এই দুই বন্ধুর বাড়ি শহরের ১০০ মিটার দূরত্বেই।
দুই বন্ধু শৈশবকাল থেকে শহরের নবরুপী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সদস্য। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুই বন্ধুই খুব জনপ্রিয়। দুই বন্ধুর মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই বন্ধুই একে অপরের বাড়িতে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন।
কিন্তু ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে দুই বন্ধুই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবারও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। দুই বন্ধুকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে সমঝোতার পরামর্শ দেন দুই পরিবারের লোকজন। গত বৃহস্পতিবার কামরুজ্জামান তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। আজ সোমবার জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুরঞ্জিত সরকারকে নির্বাচন কার্যালয় থেকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
আমি ছেড়ে দিলে আমার বন্ধুর জয়ের ধারায় কাউন্সিলর পদে হ্যাটট্রিক হবে। বন্ধুর জন্য অনেকেই অনেক কিছু করেন। আমি নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে বন্ধুকে জয়ী করেছি।
কামরুজ্জামান কামু বলেন, ‘মূলত আমরা দুই বন্ধু একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। এতে দুজনেরই নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আমি ছেড়ে দিলে আমার বন্ধুর জয়ের ধারায় কাউন্সিলর পদে হ্যাটট্রিক হবে। বন্ধুর জন্য অনেকেই অনেক কিছু করেন। আমি নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে বন্ধুকে জয়ী করেছি।’
বেসরকারিভাবে নির্বাচিত কাউন্সিলর সুরঞ্জিত সরকার বলেন, ‘বন্ধু কামারুজ্জামানকে আন্তরিক অভিনন্দন। সে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, আমি সারা জীবন তার কাছে ঋণী থাকব। আমিও বন্ধুর সব কাজে সাফল্য কামনা করি। নির্বাচনে এই ত্যাগ সাধারণত কেউ করে না।’
বন্ধু কামারুজ্জামানকে আন্তরিক অভিনন্দন। সে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, আমি সারা জীবন তার কাছে ঋণী থাকব। নির্বাচনে এই ত্যাগ সাধারণত কেউ করে না।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী কামরুজ্জামান তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ওই ওয়ার্ডে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় বেসরকারিভাবে সুরঞ্জিত সরকারকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন। এ ছাড়া ৮টি ওয়ার্ডে ৩৫ কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১১ প্রার্থীকে প্রতীক দেওয়া হয়েছে।