বন্দী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, কারারক্ষীর আত্মহত্যার চেষ্টা

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদিকে পেটানোর দৃশ্য
ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে সাজাপ্রাপ্ত এক ভারতীয় কয়েদিকে দুই হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে পেটানোর একটি ভিডিও আজ শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ শরিফ, কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস ও চরণ চন্দ্র পালকে ওই কয়েদিকে মেঝেতে ফেলে লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায়।

ওই কয়েদিন নাম শাহজাহান বিলাস। তাঁর বয়স ৬০ বছর বলে জানা গেছে। তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দুর্গাপুর এলাকার আবদু মিয়ার ছেলে। হত্যা ও ডাকাতির মামলায় ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৯১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা করেন আদালত। একটি হত্যা মামলায় ৩০ বছর এবং ৩টি ডাকাতি মামলায় যথাক্রমে ১০, ৭ ও ৭ বছর মিলে মোট ৫৪ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। সেই থেকে তিনি এ দেশের বিভিন্ন কারাগারে কয়েদি হিসেবে কাটাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১০ নম্বর সেলের কয়েদি (নম্বর ৭১৫১/এ)।

শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ শরিফ, কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস ও চরণ চন্দ্র পালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

নির্যাতনের এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার কারা অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খানকে সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের জেল সুপার ইকবাল হোসেন এবং ফেনী কারাগারের জেলার শাহাদত হোসেন মিঠুকে এ কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ গতকাল শুক্রবার সকালে কয়েদি নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ডেকে ভর্ৎসনা করেন এবং তদন্ত ও বিভাগীয় শাস্তির কথা জানিয়ে দেন। এ তথ্য জানিয়ে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার নামাজে যেতেই কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ শরিফ, কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস ও চরণ চন্দ্র পালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

মাদক ও টাকাসহ ধরা পড়ার পর এগুলো জব্দ করতে দেবে না বলে শাহজাহান উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। এই সময় তাঁকে হালকা শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শাহজাহানের বিরুদ্ধে অন্তত ৯টি অভিযোগ আছে।
শাহজাহান আহমেদ, জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহান বিলাস কারাগারে বিভিন্ন সময়েই মাদক সেবন ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে থাকেন। নির্যাতনের ঘটনাটি গত ১৫ এপ্রিলের। ওই দিন ১২টি ইয়াবা বড়ি, এক পুরিয়া গাঁজা ও ৬০০ টাকাসহ কারারক্ষীদের হাতে তিনি ধরা পড়েন। পরে শাহজাহানকে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিলের সামনে ডেকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর কাছ থেকে মাদক জব্দ ও টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললে তিনি কারারক্ষীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এরপর তাঁকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সেলে পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে আজ সন্ধ্যায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক ও টাকাসহ ধরা পড়ার পর এগুলো জব্দ করতে দেবে না বলে শাহজাহান উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। এই সময় তাঁকে হালকা শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শাহজাহানের বিরুদ্ধে অন্তত ৯টি অভিযোগ আছে।’ তিনি বলেন, ভিডিও কীভাবে ভাইরাল হলো তা তিনি জানেন না।