বদরগঞ্জে করোনা শনাক্তের হার ৮৩ শতাংশ
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ৩ দিনে ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৮৩ দশমিক ৩৩। গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই পরীক্ষা করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) সাকলাইন রিফাত জানান, তিন দিনে করোনায় আক্রান্ত ওই ২০ জনের মধ্যে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্সচালক, দুজন নার্স ও একজন পথ্য সরবরাহকারী রয়েছেন। এ ছাড়া ছয় দিন আগে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরশাদ হোসেন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও দুজন নার্সের করোনা শনাক্ত হয়।
সাকলাইন রিফাত জানান, গত মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭ জন, পরের দিন বুধবার দুজনের মধ্যে ২ ও গতকাল ১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উপজেলায় তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। করোনাও দ্রুত ছড়াচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে চলাফেরা করতে হবে।
হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক জানান, উপজেলায় করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উপসর্গ থাকার পরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করছেন না। এ কারণে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের বেশির ভাগই হচ্ছেন সর্দি–জ্বর ও গলাব্যথার রোগী।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শাকির মুবাশ্বির জানান, হাসপাতালে অফিস চলাকালীন বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। উপসর্গ দেখামাত্র বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
গত তিন দিন বদরগঞ্জ উপজেলার নাগেরহাট, পাঠানেরহাট, ট্যাক্সেরহাট, কালীরহাট, লালদীঘিরহাট ও বদরগঞ্জ পৌরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, করোনা দ্রুত ছড়ালেও ওই হাটবাজারগুলোতে বিকিকিনি করতে আসা মানুষেরা গিজগিজ করছে। বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না।
কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বাজারে আগত ব্যক্তিদের ৫ থেকে ৬ শতাংশ মাস্ক ব্যবহার করলেও তারা কেউ কেউ নাকের নিচে মাস্ক রেখে বাজারঘাট করে।
বদরগঞ্জ পৌর বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। মুখে মাস্ক রেখে ক্রেতার সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলা যায় না। এ ছাড়া মানুষ এখন আর মাস্ক পরে না। কারণ, করোনাকে মানুষ ভয় পায় না।
দেশে করোনার সংক্রমণ রোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু উপজেলার ওই হাটবাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, টিকা সনদ প্রদর্শন করে খাওয়াত দূরের কথা, হোটেল–রেস্তোরাঁগুলোতে মানুষ গিজগিজ করছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রেস্তোরাঁমালিক বলেন, ‘সরকার বললে কি সব মানা যায়! আমি সনদ ছাড়া দোকানে ঢুকতে না দিলে সারা দিন এক টাকাও বিক্রি হবে না। না খেয়ে বউ–বাচ্চা নিয়ে মরতে হবে।’
বৈরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব বলেন, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আইন প্রয়োগে বাধ্য করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। অন্যথায় একপর্যায়ে করোনার প্রকোপ বেড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, মানুষকে নিজের স্বার্থে স্বাস্থ্যসচেতন হতে হবে। বাধ্য করে সবকিছু আদায় করা যায় না। পুলিশ দেখলে ব্যবসায়ীরা মাস্ক পরে। চলে এলে মাস্ক খুলে রাখে। তাহলে পুলিশ কী করবে!