বছরে ৭০ হাজার রোগীকে সেবা দিচ্ছে সিআরপি
পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশির ব্যথা, স্নায়ুরোগ, মেরুরজ্জু ও পক্ষাঘাতগ্রস্ততার সমস্যাসহ বার্ধক্য ও খেলাধুলাজনিত বিভিন্ন সমস্যা এবং রোগে এখানকার থেরাপিস্টরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। সিআরপির সাভার কেন্দ্রসহ নয়টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়।
আজ ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) ফিজিওথেরাপি বিভাগের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী ফেসবুকে সরাসরি কর্মসূচিসহ বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সিআরপির ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশির ব্যথা, স্নায়ুরোগ, মেরুরজ্জু ও পক্ষাঘাতগ্রস্ততার সমস্যাসহ বার্ধক্য ও খেলাধুলাজনিত বিভিন্ন সমস্যা এবং রোগে এখানকার থেরাপিস্টরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। সিআরপির সাভার কেন্দ্রসহ নয়টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে বছরে ৭০ হাজার রোগীকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ফারহানা আক্তার (২১) চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্রী। তিনি গুলেড বারি সিনড্রোমে (জিবিএস) আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট অচল হয়ে পড়েন। মাথা ছাড়া শরীরের আর কোনো অংশ নাড়াতে পারতেন না তিনি। সেই ফারহানা সাভারের সিআরপির ফিজিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে এখন লাঠি বা অন্য কিছুর ওপর ভর করে হাঁটতে পারেন।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের আবদুর রবের মেয়ে ফারহানা বলেন, ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট সকালে তাঁর বাম হাতের সব আঙুল অবশ হয়ে যায়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধীরে ধীরে শরীরের পেশিগুলো নিস্তেজ হয়ে অচল হয়ে পড়েন তিনি। ওই দিনই চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসায় তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ২৮ আগস্ট তাঁকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে সপ্তাহখানেক চিকিৎসার পর তাঁকে সিআরপিতে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই থেকে তিনি সিআরপির ফিজিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গতকাল সোমবার ফারহানার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট সুলক্ষণা শ্যামা বিশ্বাস। তিনি বলেন, জিবিএস একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্তরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। মাত্র দুই মাসের চিকিৎসায় ফারহানা কারও সাহায্য ছাড়াই উঠে বসতে পারতেন। শুয়ে এ পাশ–ও পাশ হতে পারতেন।
শুধু ফারহানাই নন, হাজারো পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী সাভারসহ সিআরপির নয়টি উপকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, যাঁদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
১৯৭৯ সালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে সিআরপির যাত্রা শুরু। রোগী বাড়তে থাকলে রাজধানীর ফার্মগেটে একটি ভাড়া বাসায় এর কার্যক্রম চলে। পরে ১৯৮৯ সালে সাভারের চাপাইনে সিআরপি স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে রাজধানীর মিরপুরসহ দেশের আটটি জেলায় সিআরপির নয়টি উপকেন্দ্র রয়েছে।
১৯৭৯ সালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে সিআরপির যাত্রা শুরু। রোগী বাড়তে থাকলে রাজধানীর ফার্মগেটে একটি ভাড়া বাসায় এর কার্যক্রম চলে। পরে ১৯৮৯ সালে সাভারের চাপাইনে সিআরপি স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে রাজধানীর মিরপুরসহ দেশের আটটি জেলায় সিআরপির নয়টি উপকেন্দ্র রয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সম্পাসি গ্রামের প্রবাসী আবুল কালাম (৩৭) ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঘাড়ের নিচ থেকে তাঁর পুরো শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে উপকার না পেয়ে দুর্ঘটনার এক মাস পর চিকিৎসা নিতে আসেন সিআরপিতে।
আবুল কালাম বলেন, সিআরপির ফিজিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে তিন মাসের মধ্যে তাঁর পুরো শরীরে বোধশক্তি ফিরে আসে। দুই মাস ধরে তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে পারেন। তাঁর ধারণা, আর কিছুদিন চিকিৎসা নিলেই তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।