বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে ১০ ট্রলারডুবি, ৩০ জেলে নিখোঁজ

ফাইল ছবি

বরগুনার পাথরঘাটা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবন–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ১০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এসব ট্রলারে থাকা অন্তত ৩০ জেলের। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সুন্দরবনের দুবলারচর–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছাকাছি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী আজ শনিবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিখোঁজ জেলেদের খোঁজখবর নিচ্ছি। বিকেল তিনটা পর্যন্ত তাঁদের সন্ধান মেলেনি।’

প্রত্যক্ষদর্শী জেলেদের বরাতে বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতি জানায়, গতকাল সকাল থেকে দক্ষিণ উপকূলে বৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করছিল। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবন–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। এ সময় প্রবল ঢেউ ও বাতাসে একে একে কমপক্ষে ১০টি ট্রলার উল্টে যায়। এসব ট্রলারের অন্তত ১৪০ জন জেলে ছিলেন। ঝড় থেমে যাওয়ার পর অন্য ট্রলারের লোকজন সাগরে ভাসমান জেলেদের উদ্ধার করলেও ৩০ জেলে এখনো নিখোঁজ।

মালিক সমিতি আরও জানায়, নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায়। তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মধ্যে তিনটির নাম জানা গেছে—এফবি মায়ের দোয়া, এফবি আনিছ ও এফবি ইলিয়াস।

আরও পড়ুন

উদ্ধার হওয়া জেলেদের বরাত দিয়ে বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের দুলাল হোসেন মাঝি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সাগর তেমন উত্তাল ছিল না। আর শীতকালে সাগর শান্তই থাকে। সকাল থেকে বৃষ্টি আর থেমে থেমে দমকা বাতাস থাকলেও সাগরে তার প্রভাব ছিল কম। এর ফলে জেলেরা নিশ্চিন্তেই জাল ফেলে সাগরে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আকস্মিক ঘূর্ণিহাওয়ার সৃষ্টি হলে প্রবল ঢেউ ওঠে। এতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একে একে ট্রলারগুলো ডুবে যায়।

মাছ ধরতে যাওয়া এফবি হাওলাদার ট্রলারের প্রত্যক্ষদর্শী এমাদুল মাঝি আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে আকস্মিক ঝড় ওঠে। এতে যেমন সাগর উত্তাল হয়ে পড়ে, তেমনি তীব্র ঘূর্ণিবাতাস হয়। তবে যেখানে ট্রলারগুলো ছিল, সেখানেই এই ঘূর্ণিবাতাস সীমাবদ্ধ ছিল। এ সময় তাঁদের ট্রলারটি ওই এলাকা থেকে ৫০ গজ দূরে ছিল। তিনি চারটি ট্রলার ডুবে যেতে দেখেছেন। ১০ মিনিট স্থায়ী এ ঝড় থেমে যাওয়ার পর জেলেরা সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন।

এ সময় তিনি ট্রলার নিয়ে এগিয়ে গিয়ে আট জেলেকে তাঁদের ট্রলারে তুলে নেন। এসব জেলেদের নিয়ে তাঁরা পাথরঘাটায় ফিরে এসেছেন।

বাগেরহাটের মোংলায় কোস্টগার্ডের পশ্চিমাঞ্চলের অপারেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফর রহমান বলেন, নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারের জন্য ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় কোস্টগার্ডের উদ্ধার দল পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার দলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ জেলেদের উদ্বিগ্ন স্বজনেরা আজ সকাল থেকে পাথরঘাটায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের ঘাটে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।