‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ’ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমি দখলের অভিযোগ
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ’ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কাঁকড়াজান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহানন্দপুর-মাহমুদনগর সড়কের পাশে বারখুটিয়া এলাকায় ওই সাইনবোর্ডটি টাঙানো।
এ ঘটনায় স্থানীয় কাঁকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন জমির ক্রয়সূত্রে মালিকপক্ষ। বিষয়টি মীমাংসায় শিগগিরই একটি সালিসের আয়োজন করার কথা জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কাঁকড়াজান মৌজার ২৬২৯ নম্বর দাগে বারখুটিয়া নামে এলাকায় জমিটির অবস্থান। সাপিয়াচালা গ্রামের আবদুল লতিফ বংশপরম্পরায় ওই জমি ভোগদখল করছিলেন। প্রায় ১০ বছর আগে স্থানীয় খলিলুর রহমান নামের এক ব্যক্তি আড়াই লাখ টাকায় জমি বন্ধক নেন। খলিলুর বর্তমানে বিদেশে আছেন।
জমি বন্ধক নেওয়া প্রবাসী খলিলুরের বড় ভাই লাল মামুদ বলেন, গ্রামবাসী ওই স্থানে একটি মার্কেট করতে চান। এ জন্য ওই ক্লাবের লোকজন জমিটি অনেক দিন আগে থেকেই কিনতে আগ্রহী। কিন্তু জমির মালিক কৌশলে বেশি দামে মাদ্রাসাশিক্ষক কায়সারুল হকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ কারণেই গ্রামবাসী মিলেই ক্লাবের ঘর তুলে জমিটি দখলে নিয়েছেন। ক্লাবের ছেলেরা এর জন্য দায়ী নন। গ্রামবাসী মিলেই সাইনবোর্ডটি টাঙিয়েছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মাস দুয়েক আগে জমির মালিক আবদুল লতিফ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তিনি ওই জমি স্থানীয় বাসিন্দা কায়সারুল হক নামের এক ব্যক্তির কাছে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ১৫ দিন আগে জমিতে একটি পুরোনো ঘর তোলা হয়। ঘরের পাশে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কায়সারুল হক ও তাঁর লোকজন কেনা জমির দখল নিতে পারছেন না।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, মার্কেট করতে জমিটি তাঁদের দরকার। তবে জমিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের সাইনবোর্ড ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। এতে বঙ্গবন্ধুর সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
উপজেলার মাহমুদনগর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও বিএনপি সমর্থক কায়সারুল হক। ক্রয়সূত্রে বর্তমানে তিনি ওই জমির মালিক। কায়সারুল বলেন, ‘দুই মাস আগে আমি ও আমার বংশের ৯ জন মিলে ওই ৩৭ শতাংশ জমি কিনেছি। কিছুদিন আগে দেখি জমিতে পুরাতন ঘর তোলে “বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ” লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো। বিষয়টি আমি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। শুধু জমি দখলের উদ্দেশ্যে যুব কল্যাণ প্রগতি সংঘের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ রাখা হয়েছে।’
জমির আগের মালিক আবদুল লতিফ বর্তমানে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য ক্লাবের সদস্যদের কাছে জমি বিক্রির প্রস্তাব দিলে তাঁরা এ নিয়ে টালবাহানা শুরু করে বলে জানান তিনি। আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি কায়সারুল হকের কাছে ২০ হাজার টাকা শতাংশ মূল্যে বিক্রি করলে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে জমি দখল করে নেয়।’
২০১৫ সালে ওই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ক্লাবের সভাপতি ছিলেন রুবেল মিয়া। তিনি বর্তমানে ওই পদে নেই। ক্লাবের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে রুবেল বলেন, ‘বিএনপি নেতা কায়সারুল হক গোপনে ওই জমি বেশি দামে কিনে ফেলেন। ফলে গ্রামের সবাই মিলে ওই সাইনবোর্ড দিয়েছেন। আমি বছরখানেক ধরে গ্রামে থাকি না। এ কারণে ক্লাবের সাইনবোর্ড টানানো বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
কাঁকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের নামে কেউ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে থাকলে তা ঠিক হয়নি। বিষয়টি শিগগিরই মীমাংসা করে দেওয়া হবে।