বগুড়ায় সালমান এফ রহমানসহ ১১৭ জনের নামে হত্যা মামলার আবেদন
বগুড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ১১৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে সাবেক ছয়জন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং সাবেক তিন আইজিপি রয়েছেন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুকান্ত সাহার আদালতে মামলাটির আবেদন করেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমের ঢাকার বাসার তত্ত্বাবধায়ক সাখাওয়াত হোসেনের শ্যালক আবু সাঈদ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল ওহাব জানিয়েছেন, এই মামলার অভিযোগ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বিচারক গতকাল শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, ওই মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়াও পাঁচজনকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জাবেদ পাটোয়ারী, শহিদুল হক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম ও ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত এ রহমান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্মেদ পলক, সাবেক সাবরেজিস্ট্রার শাহ আলম ও তাঁর স্ত্রী (সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও স্থানীয় বিএনপির সাবেক নেত্রী) বিউটি বেগম, তাঁদের ছেলে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ (বিপুল) প্রমুখ।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত সাখাওয়াত হোসেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমের রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার বিজয় সরণি টাওয়ারের বাসার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম ও ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে পুলিশ ওই বাসায় প্রবেশ করে মীর শাহে আলমকে না পেয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে সাখাওয়াত হোসেনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান।
মামলার আরজিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সাখাওয়াত হোসেন বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতনের পর শিবগঞ্জ উপজেলার বিউটি পার্কের একটি বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম অগ্নিসন্ত্রাস ও সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত—এমন স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে আসামিরা। দফায় দফায় নির্যাতনে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি শিবগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানতলা মাজারের কাছে রাস্তায় সাখাওয়াতকে ফেলে রেখে যান আসামিরা। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু ঘটে। পরে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর মামলার আবেদন করেছেন।