বউ-শাশুড়ির বিষপানের পর শ্বশুরের আত্মহত্যার চেষ্টা

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

পারিবারিক বিষয় নিয়ে সকাল থেকে বউ-শাশুড়ির বাগ্‌যুদ্ধ চলছিল। রাগ-অভিমানে বাড়িতে দুপুরের রান্নাও হয়নি। খাওয়াও হয়নি পরিবারের সদস্যদের। থেমে থেমে চলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া। ঝগড়া শেষ হয় রাত ১০টায় বিষপানের মাধ্যমে। অভিমান করে বউ সুমি খাতুন (২২) বিষপান করেন। এর কিছুক্ষণ পর শাশুড়ি কাজলী বেগমও (৪২) বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। প্রতিবেশীরা তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

বউ-শাশুড়ির এ কাণ্ড দেখে শ্বশুর মোসলেম আলীও (৪৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। তবে লোকজনের বাধায় তিনি রক্ষা পান। তাঁকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার রাতে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের শ্রীপুর রামনগর গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী কাফি হোসেন পার্শ্ববর্তী কুতুবপুর গ্রামের সুমি খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কাফি হোসেন মা–বাবার সঙ্গে নিজেদের বাড়িতে থাকছেন। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বউ-শাশুড়ির মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়। গতকাল সকালে উভয়ের মধ্যে আবারও ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে রাত ১০টার দিকে অভিমান করে পুত্রবধূ সুমি খাতুন বিষপান করেন। সুমিকে অসুস্থ অবস্থায় তাঁর স্বামী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সবাই সুমিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় শাশুড়ি কাজলী বেগমও বিষপান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা তাঁকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ ঘটনা জানার পর শ্বশুর মোসলেম আলী বাড়ির পাশের একটি আমগাছের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে তাঁকে বাধা দেন এবং উদ্ধার করেন। তাঁকেও রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

গতকাল রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, বউ-শাশুড়ির স্টমাক ওয়াশ করে পেটের ভেতর থেকে বিষ বের করা হচ্ছে। স্টমাক ওয়াশের কিছুক্ষণ পর শ্বশুর মোসলেম আলীও সেখানে যান।

বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বউ-শাশুড়ির স্টমাক ওয়াশ করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা সুস্থ। তবে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। শ্বশুরের জটিল কোনো সমস্যা না থাকায় ভর্তি করানো হয়নি।

এ বিষয়ে অসুস্থ বউ-শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাঁরা রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বজনেরা বলেন, কাফি ও সুমির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে তাঁরা সুখী ছিলেন না। এ জন্য উভয়ের মধ্যকার মনোমালিন্য পরিবারের সদস্য পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফসলে দেওয়ার জন্য বিষ বাড়িতেই রাখা ছিল।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ঘটনাটি তিনি জানেন না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো অপরাধ, এটা করা যায় না।