ফেরিতে উপচে পড়া ভিড়, সামাজিক দূরত্বের ধার ধারছে না কেউ
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ আবার কর্মস্থল অভিমুখে ছুটতে শুরু করেছেন। আজ শনিবার সকাল থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ও মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে পোশাকশ্রমিকসহ মানুষের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যে সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কেউ তার ধার ধারছেন না।
সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে এ ছুটির মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। করোনাভাইরাসে ছড়িয়ে পড়া রোধে অন্তত দুই সপ্তাহ সবাইকে বাড়িতে রাখতে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সরকারের এই পদক্ষেপ। এ সময়কালে জনসমাগম তো দূরে কথা, বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরেও যাতে মানুষ বের না হয়, এ জন্য মাঠে নামানো হয়েছে সেনা। চলছে প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বিত সচেতনতা কার্যক্রম ও অভিযান।
আজ দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ পণ্যবাহী খালি ট্রাক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন ছোটখাটো যানবাহনে করে এসে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে নামছেন। দূরপাল্লার পরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ অনেক কষ্ট করে ঘাটে পৌঁছেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাঁদের অনেকেই কারখানা খোলার সিদ্ধান্তে জানালেন ক্ষোভ।
একই অবস্থা মাওয়া ফেরিঘাটের। এখানে প্রতিটি ফেরিতে শত শত মানুষ ঢাকায় ফিরছেন। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব । পোশাকশ্রমিক দিদার প্রথম আলোকে বলেন, কাল গার্মেন্টস খুলবে, তাই ফিরছেন। তবে এই কর্মী বলেন, এ পারে এসে শুনলাম কারখানার বন্ধ বাড়াবে। এখন ঢাকা যাব, নাকি ফিরে যাব, বুঝতে পারছি না।
ঝিনাইদহ থেকে আসা পোশাক কারখানার কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার আমাদের এক ধরনের বিপদে ফেলে দিচ্ছে। যেখানে সারা দেশে লকডাউন চলছে, সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজ করতে বলা হচ্ছে। আগামীকাল (রোববার) থেকে পোশাক কারখানা খোলা। বাধ্য হয়ে আজ খুব সকালে ভ্যান-রিকশা, কখনো অটোরিকশায় করে দুই ঘণ্টার পথ এভাবে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ঘাটে এসে পৌঁছলাম। এটা কি ঠিক হচ্ছে?’
খুলনা থেকে ভোর ছয়টায় রওনা দিয়েছেন ঢাকার এক পোশাকশ্রমিক মকিম বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কোথাও গাড়ি নেই। সারা রাস্তা ভেঙে ভেঙে প্রায় দশ গুণ বেশি টাকা খরচ করে দৌলতদিয়ায় পৌঁছালাম। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা যায়?’
বাগেরহাট থেকে কর্মস্থল গাজীপুরের পোশাক কারখানায় যাচ্ছেন দুই বোন মোরশিদা আক্তার ও রিক্তা আক্তার। দুই বোন আজ সকাল সাতটায় অন্যদের সঙ্গে মাইক্রোবাস ভাড়া করে রওনা করেন। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে তাঁদের জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। তিনিও বলেন, ‘একদিকে গাড়ি নেই, আরেক দিকে করোনার ঝুঁকি, এভাবে কি আসা যায়?’
এ রকম আরেকজন একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। ঝিনাইদহ থেকে তিনি ঢাকা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘রোববার থেকে অফিস খোলা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতে আজ (শনিবার) ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। উপায় নাই, বাধ্য হয়ে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রওনা হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, দেশে করোনাভাইরাস নিয়ে যেখানে আমরা সবাই শঙ্কিত, সেখানে এভাবে ভিড় ঠেলে যাওয়া আমাদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি।’
দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে সকালে ভিড়ে থাকা রো রো (বড়) ফেরি আমানত শাহর স্টাফ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাতে কিছু যাত্রী পারাপার হয়েছিল। আজ সকাল থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। একেকটি বড় ফেরিতে ৩ থেকে ৪ হাজার করে মানুষ পার হচ্ছে।’
যাত্রীদের ভিড় নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৪টি ফেরি থাকলেও বর্তমানে দুটি বড়, একটি মাঝারি ও দুটি ছোট ফেরি চলাচল করছে। পোশাক কারখানা খুলতে শুরু করায় আজ সকাল থেকে ছোট গাড়ির পাশাপাশি ঢাকামুখী অনেক মানুষ ছুটতে শুরু করেছেন।
মাওয়া ফেরি ঘাটের কর্মী রহিতুল বলেন, সকাল থেকেই দলে দলে মানুষ ফেরিতে উঠছেন। ফলে গাড়ি পারাপার কম হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে ছাড়া এত ভিড় তিনি আগে দেখেননি।