ফুটপাতে বসে বাবু বেচেন মণকে মণ মিষ্টি

মিষ্টি
ফাইল ছবি

মিষ্টির প্যাকেটে লেখা আছে শিমুল মিষ্টান্ন ভান্ডার। তবে মজার ব্যাপার হলো, এগুলো কোনো ভান্ডার বা দোকানে বিক্রি হয় না। বিক্রেতা মিষ্টি নিয়ে বসেন ফুটপাতে, সেখানেই চলে বেচা-কেনা। সপ্তাহে দুই দিন—শনি আর মঙ্গলবার মিষ্টি নিয়ে বসেন তিনি। ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। সাধারণত দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় সব মিষ্টি। পরিমাণটা কম নয়। অন্তত ৫ মণ মিষ্টি থাকে, কখনো কখনো এর চেয়ে বেশি।

এই মিষ্টি বিক্রেতার আসল নাম বেরাজ উদ্দিন (৪৫)। তবে এই নামে এখন আর কেউ তাঁকে চেনেন না। বাবু সরকার নামেই তিনি এখানে পরিচিত। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের ফুটপাতে তাঁর অস্থায়ী দোকান। বাজারে গিয়ে মিষ্টিওয়ালা বাবু বললেই যে কেউ তাঁর মিষ্টি বিক্রির জায়গা দেখিয়ে দেন।

বানেশ্বর বাজার দেশের উত্তরাঞ্চলের বড় একটি ব্যবসাকেন্দ্র। এই বাজারে সারা দেশের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ভিড় লেগেই থাকে। বেচাকেনা শুরু হয় ভোর থেকে। মিষ্টি বিক্রেতা বাবু সরকার তাঁর দুর্গাপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ভোরেই এখানে পৌঁছে যান। বাড়ি থেকে বাজারে যাতায়াতের জন্য ৫০০ টাকা ভাড়ার একটি ভটভটি আছে তাঁর।

বাবু সরকার বললেন, শনিবার হাটে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেশি থাকে। মিষ্টিও বেশি বিক্রি হয়। মঙ্গলবার ব্যবসায়ীরা কম আসেন। তাই মিষ্টি কম আনেন। তারপরও অন্তত ৫ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়। তাঁর একজন কর্মচারী আছেন। এই কর্মচারীকে প্রতি হাটে ১ হাজার টাকা করে দেন। ভোর ৫টা থেকে শুরু করে মিষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এক মিনিটের জন্যও বাবুর দাঁড়ানোর অবকাশ নেই। বাজারের যেসব শ্রমিক প্রায় সারা রাত কাজ করেন, তাঁরা ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি আর রুটি নিয়ে খেতে শুরু করেন।

বাবুর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন মিষ্টি কেনার সারিতে ছিলেন বানেশ্বর ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আলাল উদ্দিন (৫০)। বাজারের অভিজাত দোকান থাকতে কেন ফুটপাতের মিষ্টি কিনতে এসেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালো মিষ্টি যে! তাই প্রতি হাটেই কিনে খাই।’ পুঠিয়ার ভরুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মাহতাব আলী (৩৫) বললেন, মিষ্টির মান ভালো, তাই প্রতি হাটেই কেনেন।

এত মিষ্টি বিক্রির রহস্য জানতে চাইলে বাবু সরকার বলেন, তাঁর মিষ্টির দাম কম। বেশি বিক্রির জন্য তিনি দাম কম রাখেন। তাতে কেজিপ্রতি লাভ কম হলেও বেশি বিক্রি থেকে মোট আয় বেশি হয়। তাঁর কাছে তিন রকম রসগোল্লা আছে। এর দরও তিন রকম—৭০, ৮০ ও ১০০ টাকা কেজি। আর শুকনা মিষ্টির কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।

বাবু সরকার জানালেন, মিষ্টি বানানোর জন্য তাঁর কোনো কারিগর নেই। নিজেই দুধ কিনে ছানা তৈরি করেন। পরিবারের সদস্যরা মিলে মিষ্টি বানান। বাড়িতেই এই কাজ করায় তাঁকে কোনো দোকান ভাড়া দিতে হয় না। প্রতি হাটে জায়গার ভাড়া ৭৫ টাকা আর খাজনা দিতে হয় ৬০ টাকা। তাঁর দাবি, মিষ্টিতে তিনি কোনো ধরনের ভেজাল দেন না। এ জন্য তাঁর মিষ্টির স্বাদ ভালো। ফ্রিজ ছাড়াই ১৫ দিন পর্যন্ত রাখা যায়, নষ্ট হয় না। ২০ বছর ধরে তিনি মিষ্টি বিক্রি করছেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে শিমুলের নাম অনুসারে মিষ্টির ব্যবসার নাম দিয়েছেন শিমুল মিষ্টান্ন ভান্ডার। সেই ছেলে এবার এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসক হয়েছেন। আর মেয়েটি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।