ফাগুনে আগুন রাঙা পলাশ
‘ও পলাশ, ও শিমুল
কেন এ মন মোর রাঙালে
জানি না, জানি না
আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে…’
আগুনরাঙা ফাগুন এলেই মনে পড়ে লতা মঙ্গেশকর এর এই কালজয়ী গান। বাংলার বসন্ত মানেই পলাশ। আর পলাশ মানেই পর্ণমোচী বৃক্ষের লাল আভা।
ফাগুন মানে আগুন রাঙা পলাশ, বসন্ত বাতাসে পলাশের গন্ধ, ফুলে ফুলে মৌটুসী আর বুলবুলির অবাধ ছুট। পলাশ মানেই অপূর্ব বাংলাদেশ।
কয়েক দিন আগে যশোরে নেমেই শহরের ভেতর দিয়ে যেতে আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধ পেলাম। এ যে ফাল্গুন মাস! চারদিকের প্রকৃতিই যেন সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে। পাবলিক লাইব্রেরির ভেতর ঢুকতেই চোখে পড়ল বিশাল পলাশগাছ। পাতা নেই বললেই চলে। গাছভর্তি ফুল আর ফুল। কমলা রঙের পলাশ ফুল দেখে মন ভরে গেল। মুগ্ধ হতে হতে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম যে ক্যামেরা বের করতেই ভুলে গিয়েছিলাম! ক্যামেরা তাক করতেই দেখি পলাশের মগডালে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে দুটি কাঠবিড়ালি। মধু খাচ্ছে ফুলের। ক্যামেরা তাক করেও সুবিধা করা গেল না কাঠবিড়ালির ছবি তোলার বেলায়। ক্যামেরা তাক করতে করতে অন্য ডালে ছুট দেয়।
মগডালে আরও এসেছে মৌটুসীর দল, হালকা সবুজ মৌটুসীটা মেয়ে পাখি। আর কুচকুচে কালোটা পুরুষ। ওদের ছবিও তোলা দায়! এত দ্রুত তিড়িংবিড়িং করে এ ডালে–ও ডালে ছোটে, ক্যামেরার লেন্সে তাদের পাওয়াই দায়।
পাবলিক লাইব্রেরি থেকে ছবি তুলে পলাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আবার ছুটলাম জলযোগে খাবার খেতে। সকালে এখানে লুচি আর ডাল–সবজি অনন্য। যশোরের অনেক পুরোনো এই দোকানে যেতেও চোখে পড়ল দুটি পলাশগাছ। গাছভর্তি ফুল। গাছের নিচে ঘাসের ওপর পড়ে আছে অজস্র পলাশ। এখানেও দেখা মিলল দুটি বুলবুলি পাখির, তারা মধু খেতে ব্যস্ত। পলাশের এত সৌন্দর্য দেখতে দেখতে গাছের নিচে টং–দোকানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই মনে হলো, জীবন সুন্দর! মনে হলো, ‘যায় বেলা যাক না/ আঁখি দু’টি থাক না/ সুন্দর স্বপ্নে মগ্ন…।’