জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে মারধর ও নির্যাতন করা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের শাস্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন একদল শিক্ষার্থী। তবে রোববারের মধ্যে দোষী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আশ্বাস পেয়ে দেড় ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটার দিকে অনশন ভেঙেছেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, রোববারের মধ্যে দোষী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার। রোববারের মধ্যে আশ্বাসের বাস্তবায়ন না দেখলে ফের আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ওয়ালিদ নিহাদকে আটকে রেখে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসানের অনুসারী আবু নাঈম আবদুল্লাহ ওরফে যাযাবর নাঈমসহ কয়েকজন। রাকিবুলের অনুসারী হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি না করার কারণে এ মারধর ও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। তবে ঘটনার শুরু থেকেই রাকিবুল হাসান বলে আসছেন, তাঁর কর্মীরা ওয়ালিদকে মারধর করেননি।
এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ জন্য ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন তাঁরা। এরপর আরও একাধিক কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজনকে শিক্ষার্থীকে মারধরে জড়িত ছাত্রলীগের কর্মীরা হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হুমকির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আজ বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষকদের অবহিত করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত সোমবার থেকে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ বেলা সাড়ে তিনটায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান, শিক্ষক সমিতির সভাপতিসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা সেখানে উপস্থিত হন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আগামী রোববারের মধ্যে ওয়ালিদের ওপর নির্যাতনকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করার আশ্বাস দেন শিক্ষকেরা।
এ সময় শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রোববার উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে দোষী শিক্ষার্থীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
কোষাধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন বলেন, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আগামী রোববার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় হলেও আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, দোষী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষকদের বক্তব্যের সময় একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, এ ধরনের আশ্বাসে ভরসা করা যায় না। তাঁরা আগামী রোববারের মধ্যে শাস্তির বিষয়টি উপাচার্যের কাছ থেকে শুনতে চান। প্রয়োজনে উপাচার্যের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে কথা বলার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তবে উপাচর্য শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ বলে জানান শিক্ষকেরা। পরে শিক্ষকদের আশ্বাসে রোববার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। কোষাধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
আহত শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদের বড় ভাই আবদুল আজিজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওয়ালিদকে গতকাল বুধবার ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মারধরকারীরা ওয়ালিদের বুকে পা দিয়ে চাপ দেয়। সে কারণে তাঁর শ্বাসকষ্টের মতো কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।