প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্ত্রীর আবেদন, স্বামীকে সাময়িক বরখাস্ত

স্বামীর বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে আগের কর্মস্থলে বহাল ও কোম্পানির ফ্ল্যাট ছাড়ার আদেশ স্থগিতের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছিলেন মাসুদা বেগম। এ খবর শুনে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) আওতাধীন মেঘনা গ্যাসক্ষেত্রের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তাকর্মী আকতার আহমদ বখতীয়াকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। মাসুদার দাবি, কর্তৃপক্ষ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের ফ্ল্যাটটি খালি করার নির্দেশ দিয়েছে।

বিজিএফসিএল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ জুন বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তাকর্মী আকতার আহমদকে বিজিএফসিএলের প্রধান কার্যালয় এবং তিতাস ক্ষেত্রের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মেঘনা ক্ষেত্রে বদলি করেন। গত ২৮ জুন তাঁর নামে বরাদ্দ ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ১৫ আগস্ট থেকে বাতিলের চিঠি দেন উপমহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন)।

বিজিএফসিএলের আদেশে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির ফ্ল্যাট অবৈধভাবে দখল, ফ্ল্যাট খালি করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আদেশ নির্দেশ পালনে অবাধ্যতা এবং স্ত্রীকে দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আবেদন করান আকতার।

মাসুদা বেগমের ভাষ্য, গত ২৭ জুলাই তিনি স্বামী আকতারের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে আগের কর্মস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাখা, ফ্ল্যাট ছাড়ার আদেশ স্থগিত করা ও আগের ফ্ল্যাটটি বহাল রাখা এবং স্বামীর বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছেন তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন।
বিজিএফসিএল সূত্রে জানা গেছে, বিজিএফসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ টি এম শাহ আলম গত ৮ সেপ্টেম্বর আকতারকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। আদেশে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির ফ্ল্যাট অবৈধভাবে দখল, ফ্ল্যাট খালি করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আদেশ নির্দেশ পালনে অবাধ্যতা এবং স্ত্রীকে দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আবেদন করান আকতার। তাই বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ২৪ (২) ধারা অনুযায়ী আকতারকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
বরখাস্তের আদেশের দুই ঘণ্টা আগে একই অভিযোগে কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) নাছির উদ্দিন স্বাক্ষরিত আদেশে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফ্ল্যাট ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফ্ল্যাট না ছাড়লে ১ অক্টোবর থেকে বাসস্থান বরাদ্দ বিধির ১৮ ধারা অনুযায়ী উক্ত ফ্ল্যাটের পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
আকতারের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝরা উপজেলার চাকরিশিরা গ্রামে। তিনি ১৯৮৮ সালে বিজিএফসিএলের প্রধান কার্যালয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগদান করেন। পরে জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তাকর্মী পদে তাঁর পদোন্নতি হয়। বিজিএফসিলের আওতাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুরের তিতাস লোকেশন-সি আবাসিক (তিন নম্বর গ্যাসক্ষেত্র) এলাকার স্বর্ণালী-২ ফ্ল্যাটে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তিনি।

আকতারের পরিবার ও মহাব্যবস্থাপকের (প্রশাসন) কাছে দেওয়া অভিযোগ থেকে পাওয়া ভাষ্য, ওই আবাসিক এলাকার বর্ণালী ভবনের তৃতীয় তলায় কোম্পানির গাড়িচালক হেলাল মিয়া (৪৫) ও স্বর্ণালী ভবনের তৃতীয় তলায় আরেক কর্মচারী মো. কলিন্স (৩৫) পরিবার নিয়ে থাকেন। গত বছরের মে মাসের প্রথম দিকে হেলালের এক ছেলে আকতারের বাসার সামনে লাগানো সবজি গাছের ক্ষতি করে। বিষয়টি জানালে হেলালের স্ত্রী উল্টো আকতারের বড় মেয়েকে গালিগালাজ করেন। গত বছরের ১০ মে রাতে বাসার সামনে একা পেয়ে আকতারের মেয়েকে লাঞ্ছিত করেন হেলাল। মেয়েকে লাঞ্ছিতের কারণ জিজ্ঞেস করলে আকতারকে ঘুষি মারেন হেলাল। সে সময় আকতারের মেয়ের ওপরও তাঁরা হামলা চালান। পরে কর্তব্যরত আনসার সদস্য এবং প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে।

আমার স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই বদলির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি। আমরা বাইরের বলে কি বিচার পাব না?
মাসুদা বেগম, সাময়িক বরখাস্ত আকতার আহমদের স্ত্রী

এ বিষয়ে আকতার গত বছরের ২৩ জুলাই বিজিএফসিএলের মহাব্যবস্থাপকের (প্রশাসন) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
আকতারের পরিবারের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার পর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা হেলাল উদ্দিনের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি সমাধান করেন। আর তদন্ত কমিটি নিজেদের ইচ্ছেমতো কথা লিখে সেই কাগজে আকতারের স্বাক্ষর নেন। কর্তৃপক্ষ হেলালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর পর থেকেই তাদের প্রতি নানাভাবে হেলালের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। গত ৩ জুনের মারধরের ঘটনায় গত ২১ জুন আকতারের মেয়ে মাশুদা বেগম (২০) বাদী হয়ে হেলাল ও কলিন্সকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন।

আকতারের স্ত্রী মাসুদা বেগমের দাবি, ‘আমার স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই বদলির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি। আমরা বাইরের বলে কি বিচার পাব না? আমার মেয়ের শরীরে এখনো লাঞ্ছিত করার চিহ্ন আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাড়িচালক হেলাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক আগে এসব সমাধান হয়েছে। এখানে ওনার অভিযোগ তো অনেক কিছু। প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গিয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। ওনারা যা খুশি করতে থাকুক।’
বিজিএফসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ টি এম শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে তার নিয়মনীতি ও বিধান মানতে হবে। কোনো সমস্যা বা অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তিনি একবারের জন্যও আমার কাছে আসেনি এবং চাকরি বিধিমালা মানেননি। তবে কোম্পানির চাকরির নিয়মনীতি মেনে চললে তাঁর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে।’