প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের মান রেখেছেন জুবায়ের
ছয় বছর আগে হামলায় জুবায়ের হোসেনের বাবা খাইরুল ইসলাম নিহত হন। বাবা ছিলেন তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাঁকে হারিয়ে মা-বোনকে নিয়ে অকুলপাথারে পড়েন জুবায়ের। পরে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার অনুদান পায় পরিবারটি। কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যান মেধাবী জুবায়ের। এবার জুবায়ের সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
জুবায়ের হোসেনের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান গ্রামে। তাঁর চাচা ঢাকায় পোশাকশ্রমিকের কাজ করেন। সেই সূত্রে জুবায়ের ঢাকার হামদর্দ পাবলিক কলেজে ভর্তি হন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয়। এসএসসির পর এইচএসসিতেও জুবায়ের জিপিএ-৫ পান। তিনি এবার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
খাইরুল ইসলাম নিরাপত্তাপ্রহরীর চাকরি করে সংসার চালাতেন। তাঁর চাচা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হয়। ওই দিন দুপুরে খাইরুল ইসলামের চাচার বাড়িতে জামায়াত-শিবিরের হামলা হয়। হইচই শুনে খাইরুল বাড়ির বাইরে আসেন। তখন খাইরুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে ২০১৩ সালের ২০ মার্চ প্রথম আলোয় ‘দুই সন্তানের চোখে শুধুই অন্ধকার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
পরিবারের দুরবস্থার কথা জানিয়ে খাইরুলের স্ত্রী লিপি খাতুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে তাঁকে ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়। সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া মুনাফার টাকায় পড়াশোনা করে এই দম্পতির সন্তানেরা। জুবায়ের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। জুবায়েরের বোন খাদিজাতুল কোবরা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
লিপি খাতুন বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরে তাঁর একটি কন্যাসন্তান হয়। চার সদস্যের পরিবার। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে সংসার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালাতে হয়। এখন মুনাফা কমে এসেছে। জুবায়েরের ছোট চাচা শাহীনুর রহমান ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি কিছু সহযোগিতা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তার ভর্তির সময়ই নাকি ২৫ হাজার টাকা লাগবে। বই-পুস্তক কেনাসহ আরও কিছু আনুষঙ্গিক খরচ লাগবে। এখন কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সঞ্চয়পত্র ভাঙলেও তো খরচ হয়ে যাবে। পরে না খেয়ে থাকতে হবে।’
মায়ের মতোই দুশ্চিন্তায় জুবায়ের। তিনি বলেন, ২৪ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ভর্তি হতে হবে। এখন পর্যন্ত টাকার জোগাড় হয়নি।