প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও সংঘর্ষে জড়াল পাকুন্দিয়া আ.লীগের দুই পক্ষ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উপজেলার পুলেরঘাট বাজার এলাকা। ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারধরের ঘটনায় সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। গত একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস পালন এবং গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে গিয়েও এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর বাইরেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সোহরাব উদ্দিন পক্ষের নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলেরঘাট পুরান বাজার থেকে পাকুন্দিয়া-পুলেরঘাট সড়ক দিয়ে পুলেরঘাট নতুন বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলেরঘাট বাজারের কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের ওপর থেকে তাঁদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালান বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ ভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
সরেজমিন ঘুরে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কে ও পুলেরঘাট বাজার থেকে পাকুন্দিয়া সড়কে বাজারের চারদিকে উভয় পক্ষের সহস্রাধিক লোকজন ধারালো অস্ত্র রামদা, বল্লম, হকিস্টিক, কাতরা নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু করে। বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে। এ সময় চ্যানেল ২৪–এর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আলম ফয়সালের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের আঘাতে তাঁর মাথা ফেটে যায়। ফয়সালকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এ সময় প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২২ জুলাই মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের সমর্থকেরা পালন করেন নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি। এরপর একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। এর পর থেকে প্রতিটি সরকারি দিবস ও আওয়ামী লীগের ছোটখাটো কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও মিছিল সহকারে জড়িয়ে পড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।
এ বিষয়ে মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলেরঘাট বাজারে যান। এ সময় পুলিশের সহায়তায় বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের লোকজন ন্যক্কারজনকভাবে তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শুধু তা–ই নয়, তিনি আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় দিবস, দলের কোনো কর্মসূচি সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাধার সম্মুখীন হন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল প্রথম আলোকে বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের সংঘর্ষে জড়ানো একদম ঠিক হয়নি। দলের প্রতিষ্ঠর দিন এমন সংঘর্ষ খুবই অন্যায় হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে কেন্দ্রকে জানাবেন এবং দলীয় ব্যবস্থা নেবেন।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সারোয়ার জাহান বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে পুলেরঘাট বাজার এলাকায় বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন