২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘পুড়ে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি’ বলতে বলতেই মারা গেলেন মহিউদ্দিন

নিহত মহিউদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

‘ভাইরে, পুড়ে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি। আমার চেহারা শেষ।’ বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে এ কথা বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন মো. মহিউদ্দিন (২০)। মহিউদ্দিন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামের আহমদুর রহমানের ছেলে। বছর চারেক আগে সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনাকবলিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে চাকরি নেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

আজ রোববার দুপুরে নিহত মহিউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর বড় বোন শারমিন আক্তারের সঙ্গে। কথা বলতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন দুই বোন শারমিন আক্তার ও রুমা আক্তার। মহিউদ্দিনের দুর্ঘটনার খবর শুনে রাতেই তাঁরা শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছেন।

ভাইরে, পুড়ে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি। আমার চেহারা শেষ। তোমরা আমাকে মাফ করে দিয়ো
মহিউদ্দিন

শারমিন আক্তার বলেন, ‘মহিউদ্দিনের জন্মের এক বছরের মধ্যে আমাদের মা মারা যান। বড় কষ্ট করে তাকে বড় করেছি আমরা। কিন্তু আজ তাকে হারালাম।’ তিনি জানান, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে মহিউদ্দিন সবার ছোট। চার বছর আগে তিনি চাকরি শুরু করেন। সবার ছোট হলেও তিনি পুরো পরিবার দেখতেন ও বোনদের খোঁজখবর রাখতেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

আশপাশের গ্রামগুলোয় ছাই আর পোড়া গন্ধে বিপাকে শিশু, বৃদ্ধরা

আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটারজুড়ে

ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মী নিখোঁজ, অসুস্থ দুজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায়

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯, আগুন এখনও জ্বলছে

‘অভাব দূর হলো ঠিকই, ছেলে আমার বেঁচে রইল না’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহিউদ্দিনের লাশ আনতে যান তাঁর দুই ভাই শাহাবুদ্দিন ও আব্বাস। শাহাবুদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার রাতে ঘটনার পরপরই ভিডিও কল দেয় মহিউদ্দিন। তখন সে শুধু বলছিল, “ভাইরে, পুড়ে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি। আমার চেহারা শেষ। তোমরা আমাকে মাফ করে দিয়ো।” এর এক ঘণ্টা পর আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া যায় ঘটনাস্থলে।’

শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন।

সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম প্রথম আলোকে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে অনেকে চলে গেছেন। ৭০ জন চিকিৎসাধীন। আর চারজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন।
আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে অভিযানে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল।