চট্টগ্রামে জীবিত এক যুবককে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত উল্লেখ করে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা দীপংকর চন্দ্র রায় চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আজ মঙ্গলবার তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে একই সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের এক উপকমিশনারকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। অন্যদিকে জীবিতকে মৃত দেখানোর সংবাদ আজ আদালতপাড়াসহ চট্টগ্রাম নগরে বেশ আলোচিত হয়। বিষয়টি ছিল সবার মুখে মুখে। নগর পুলিশের কার্যালয়ে ছিল আলোচনা।
‘আমি তো বেঁচে আছি, কখন বন্দুকযুদ্ধে মরলাম’ শিরোনামে আজ মঙ্গলবার শুধু প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর পুলিশ কমিশনার পুলিশের অভিযুক্ত সদস্যকে বরখাস্ত ও তদন্তের নির্দেশ দেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার আমিন জুট মিল এলাকায় ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর আসামি মো. জয়নালসহ অন্যরা দা, কিরিচ নিয়ে হামলা চালান বাদী শাহ আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর। এই ঘটনায় করা মামলায় ছয়জনকে আসামি করে এবং জয়নালকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে গত ডিসেম্বরে অভিযোগপত্র দেন এসআই দীপংকর চন্দ্র রায়। তিনি ওই সময় বায়েজিদ থানায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জয়নাল নিহত হওয়ায় তাঁকে বাদ দেন বলে এসআই উল্লেখ করেন। কিন্তু প্রথম আলো সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে জয়নালকে জীবিত দেখতে পায়। একই সঙ্গে মৃতের খবর শুনে অবাক হয়ে যান জয়নাল, তাঁর বাবা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ ওঠায় এসআই দীপংকরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্তের জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনারকে (উত্তর) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৃত উল্লেখ করে বাদ পড়া আসামি জয়নালকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন (ট্রায়ালে), তাই আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে করা হবে। তবে আসামি বাদ পড়বেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসআই দীপংকরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে দীপংকর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ভুলের জন্য অনুতপ্ত।
মামলাটি চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন। মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি আবিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জঘন্যতম ভুল করায় এসআই দীপংকরকে শোকজ করে কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে পরবর্তী নির্দেশ দিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হবে। বাদ পড়া আসামি জয়নালকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে করা হবে।