বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে কিছুদিন হলো। এরই মধ্যে অনেকের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সড়কের বিভিন্ন অংশে বন্যার পানি জমে আছে। এতে এলাকাবাসীকে নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এই চিত্র গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়নের। এরই মধ্যে সরকারিভাবে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসী এলাকার রাস্তাঘাটগুলো আরও উঁচু করার দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঢালজোড়া ইউনিয়নে যাওয়ার প্রধান সড়ক ডোবাইল-ধানতারা সড়কটির বেশির ভাগ অংশই পানিতে তলিয়ে গেছে। মাঝে একটি সেতু রয়েছে, সেটিও পানির নিচে। এ কারণে এলাকাবাসীকে ডোবাইল এলাকা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আশপাশের ঘরবাড়িগুলো বন্যায় তলিয়ে গেলেও এখন পানি কমায় ঘরবাড়িগুলো জেগে উঠেছে। চারপাশে পানি থাকায় সাপ, বিচ্ছুসহ পোকামাকড়ের ভয়তো আছেই। ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে দেওয়াইর বাজার। ওই বাজার থেকে আড়াইগঞ্জ-বেনুপুর সড়কটি ডুবে গেছে। সেই রাস্তায় পানি থাকলেও কিছু যানবাহন পানির ওপর দিয়েই চলাচল করছে। বিশেষ করে ট্রাক ও অটোরিকশা। এই অবস্থা দেখা গেছে ডোবাইল-রসুলপুর সড়ক, বাসুরা থেকে ভাঙ্গুরী ও ডোবাইল থেকে পাকুরাইল সড়কের।
দেওয়াইর বাজার এলাকায় কথা হয়, ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার রাস্তাঘাটগুলো এখনো পানিতে তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার পানি নেমে গেলেও রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে আছে।
ডোবাইল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানা গেছে, ডোবাইল ইউনিয়নে ২৩টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৫০০ বাড়ি এবারের বন্যায় ডুবে যায়। ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এখনো পানি জমে আছে। তাদের এলাকার সব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেলেও পানি কমতে থাকায় অনেক রাস্তা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এখনো পাঁচটি সড়কের বেশির ভাগ অংশে পানি জমে আছে। এগুলোর মধ্যে আড়াইগঞ্জ-বেনুপুর সড়কের তিন কিলোমিটার, ডোবাইল-ধানতারা সড়কের দুই কিলোমিটার, রাসুরা-ভাঙ্গুরী সড়কের আংশিক, ডোবাইল থেকে পাকুরাইল সড়কের তিন কিলোমিটার ও দেওয়ার থেকে ভাঙ্গুরী সড়কের আংশিক রাস্তা ডুবে আছে।
বেনুপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কলেজছাত্র জসিম উদ্দিন জানান, তাঁদের এলাকার একমাত্র সড়কটি এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। নৌকায় করে এলাবাসীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ডোবাইল এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, বন্যায় যে রাস্তাগুলোতে পানি উঠেছিল, সেগুলো এখন ভেঙে নষ্ট হচ্ছে। নতুন করে মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বন্যায় ১৮২টি গ্রামের ১৮ হাজার ৫০৮টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়ে ছয় হাজার পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়। গত শুক্রবারও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তাঁর ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ঢালজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) মো. আক্তারোজ্জামান জানান, তাঁদের ইউনিয়নে ২৩টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৫০০ বাড়িতে বন্যার পানি ওঠে। এখন বাড়ির পানি নেমে গেলেও তাঁর ইউনিয়নের পাঁচটি সড়কে এখনো পানি আছে। তাঁর এলাকার অনেক মানুষ কাজে যেতে পারছে না। তাঁদের জন্য ত্রাণ প্রয়োজন।
কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদার জানান, উপজেলার যেসব রাস্তা ভেঙে গেছে, সেগুলো দ্রুত মেরামত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত সব রাস্তা মেরামত করা হবে।