বন্যা পরিস্থিতি
পানি কমায় স্বস্তি, আছে দুর্ভোগও
বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এখনই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে পারছেন না মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট।
সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। সুনামগঞ্জেও বন্যার পানি কমেছে। নেত্রকোনা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় বিভিন্ন নদ–নদীর পানি কমতে শুরু করায় গতকাল বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে হবিগঞ্জে বন্যার পানি বেড়ে নতুন ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যের সংকট।
সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি কমলেও অন্যান্য নদ-নদীর পানি কিছু পয়েন্টে বেড়েছে। আবার কিছু পয়েন্টে পানি স্থির রয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণসামগ্রী বিভিন্ন ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বন্যায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি কলেজে ১৬ জুন বৃহস্পতিবার রাতে পাশের সুলতানপুর, গাঙপার হাটি ও আশপাশের ৭৫টি পরিবার আশ্রয় নেয়। গতকাল দুপুরে কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পরিবার এখনো বাড়িতে ফেরেনি। দুটি কক্ষে আছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। মিলনায়তনের মেঝেতে ভাগ করে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে পরিবারগুলো। অন্য কক্ষে বেঞ্চ দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। ঘরের ভেতরেই রান্নাবান্না ও খাওয়াদাওয়া চলছে।
শহরের আরও পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে। উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গ্রামেও একই অবস্থা। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। সদর উপজেলার মইনপুর গ্রামের বাসিন্দা মরতুজ আলী বলেন, মানুষ তো এখন বাড়ির চিন্তায় আছে। মানুষের হাতে টাকাপয়সা নেই। সরকার সাহায্য না করলে ঘরে যেতে পারবেন না।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে এখনই পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে না। পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সহায়তা পাবেন।
হবিগঞ্জে বন্যায় নতুন করে আরও ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে জেলার ছয়টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়ন পুরোপুরিভাবে বন্যাকবলিত হয়েছে। গতকাল জেলার নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় বন্যার পানি বেড়েছে। তবে হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও বাহুবল উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। ছয় উপজেলায় ২৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এখনো অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছায়নি।
জামালপুরে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যের সংকট। বন্যার কারণে এক সপ্তাহ ধরে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় এখন তাঁরা তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারছেন না।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার কিছু এলাকার রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি থেকে পানি নামায় মানুষ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তবে কলমাকান্দার ৮টি ইউনিয়নের ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত ২৬৩ মেট্রিক টন চাল, ৯ লাখ টাকা ও ৮ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই।
তিস্তার পানি কমায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। গাইবান্ধাতেও সব নদ-নদীর পানি কমছে। বন্যায় এ পর্যন্ত সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের ৬১ হাজার ৫১৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম ফয়েজ উদ্দিন। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। জেলায় এবারের বন্যায় ৯ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৩১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর সিরাজগঞ্জে কমতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। তবে এখনো এখনো পানিবন্দী রয়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বগুড়াতেও যমুনা নদীর পানি কমেছে। তবে বন্যাদুর্গত সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় ত্রাণের জন্য মানুষের হাহাকার দেখা গেছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ ও বগুড়া এবং প্রতিনিধি, সিলেট, হবিগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, নীলফামারী ও গাইবান্ধা]