পাটুরিয়ায় যানবাহনের চাপ, ভোগান্তিতে যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা

সাপ্তাহিক ছুটি ও পন্টুন সমস্যার কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে পাটুরিয়ার জিরো পয়েন্ট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে পাটুরিয়া প্রান্তে যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী গাড়ি দীর্ঘ সারিতে আটকা পড়েছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এসব যানবাহনের যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল-জোবায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, পাটুরিয়া প্রান্তে ৪ নম্বর ঘাটের পন্টুন সমস্যা, দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ও ফেরিসংকটের কারণে ঘাট এলাকায় যানবাহনগুলোর চাপ বেড়েছে। আজ দুপুর ১২টার দিকে পাটুরিয়া প্রান্তে অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী বাস, শতাধিক ব্যক্তিগত বিভিন্ন গাড়ি ও চার শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি আটকে রয়েছে।

ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার অন্যতম প্রবেশপথ হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। আজ ভোর থেকে ঝোড়ো বাতাসের কারণে এ নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। এরই মধ্যে সকাল ছয়টার দিকে দৌলতদিয়া থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে আসা রো রো ফেরি শাহ মখদুম পাটুরিয়ার ৪ নম্বর ঘাটে আসার পর ঝোড়ো বাতাসের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পন্টুনে সজোরে আঘাত করে। এতে পন্টুনটি উঁচু হয়ে যাওয়ায় এ ঘাট দিয়ে সকাল আটটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ফেরিতে যানবাহন ওঠানো-নামানো বন্ধ থাকে।

এ দিকে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে অনেক যাত্রী গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এতে অন্য সময়ের চেয়ে পাটুরিয়া প্রান্তে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনের চেয়ে এ নৌপথে ফেরির সংখ্যা কম হওয়ায় এ চাপ আরও বেড়েছে। এসব কারণে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সময় নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় যাত্রী, যানবাহনের শ্রমিকদের আটক থাকতে হচ্ছে।

পারিবারিক কাজে কর্মস্থল ঢাকা থেকে ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন আলতাফ হোসেন (৪৫)। সকাল ১০টার দিকে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসে পাটুরিয়া ঘাটে আসার পর আটকা পড়েন। দুপুর ১২টার দিকে পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় আটকে থাকা আলতাফ বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটিতে ঘাটে চাপ বেশি থাকে। তবে চাচা তো ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে না থাকলেই নয়। দুই ঘণ্টা ধরে আটকে আছি।’

ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও রয়েছে পাটুরিয়া প্রান্তে। ৫ নম্বর ঘাট ছাড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, হাইয়েচ ও জিপ গাড়ির দীর্ঘ সারিতে নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাকার মিরপুর থেকে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে মাগুরা সদরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন রাকিবুল হাসান (৪০)। ৫ নম্বর ঘাটের ফেরির কাউন্টারে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

এ সময় রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বাসে যানজটের কবলে পড়ার আশঙ্কায় প্রাইভেটকারের জ্বালানি খরচ ও ফেরিভাড়ার পরও নিজের গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য সেই অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে। এখানে সেতু না হওয়া পর্যন্ত এ ভোগান্তি শেষ হবে না।’

পণ্যবাহী পরিবহনের শ্রমিকদের ভোগান্তি আরও বেশি। দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত তাঁদের নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় আটকে থাকতে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে মনিহারি মালামাল নিয়ে যশোরের উদ্দেশে পাটুরিয়ায় আসেন ট্রাকের চালক আমজাদ হোসেন। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বলেন, দুই দিন ধরে ঘাটে আটকা থাকলেও ফেরির টিকিট পাননি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে তিনি ও তাঁর সহকারীকে খাওয়াতে হচ্ছে। এভাবে দুই থেকে তিন দিন আটকে থেকে গাড়ির মালিকও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল বলেন, এ নৌপথে ১৮টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কিছুটা বেশি। তবে বিকেলের দিকে এ চাপ কমে আসবে।