পাটুরিয়া ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা, গরমে যাত্রীদের ভোগান্তি

দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকা বাসের যাত্রীদের কেউ কেউ নেমে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিচ্ছেন। রোববার দুপুরে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট এলাকায়
ছবি: আব্দুল মোমিন

রোববার বেলা দেড়টা! মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সারি। তপ্ত দুপুরে দীর্ঘ সময় বাসে বসে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বাধ্য হয়ে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বাস থেকে নেমে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন গৃহবধূ শিরিন আক্তার (৩০)।

শিরিন আক্তার বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘাটে আসার পর থেকে আটকে আছেন। দীর্ঘ লাইনে আটকে পড়েছে বাস। প্রচণ্ড গরমে শিশুসন্তানেরা বাসের ভেতর কান্নাকাটি করায় বাস থেকে নেমে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন।

শিরিন আক্তার আরও বলেন, তাঁর স্বামী কামাল হোসেন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদের আগে যানজটে দুর্ভোগ এড়াতে দুই সন্তানকে নিয়ে আগেভাগেই ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। স্বামীর অফিস ছুটি হয়নি। তাই ছোট ভাই ইলিয়াস হোসেনকে (২৫) নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন।

শুধু এই নারীই নন, ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে রওনা হওয়া দেড় শতাধিক বাসের কয়েক হাজার যাত্রী এদিন এভাবে দুর্ভোগে পড়েন। প্রচণ্ড গরমে তাঁদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এসে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

ঈদের এক সপ্তাহের বেশি সময় বাকি। এখনই পাটুরিয়ায় যাত্রীবাহী বাসের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেলা দুইটা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসগুলো পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কে প্রায় দেড় কিলোমিটার যানজটে আটকা পড়েছে। এসব বাসের অধিকাংশ যাত্রী ঈদের আগে ভোগান্তি এড়াতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তবে ভোগান্তি তাঁদের পিছু ছাড়েনি।

বেলা একটার দিকে পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাটের অভিমুখে ফেরির অপেক্ষায় ছিল বিভিন্ন পরিবহনের ৩০-৩৫টি যাত্রীবাহী বাস। এ সময় ছবি তুলতে গেলে সাকুরা পরিবহনের একটি বাসের সুপারভাইজার সেলিম হোসেন বলেন, ‘ভাই, ছবি তুইল্যা আর কী হবে! অবস্থার তো কোনো পরিবর্তন হয় না। ঘাটে এসে সেই দীর্ঘ সময় আটকা থাকতে হয়।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম নৌপথ এটি।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে গত আগস্ট থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ওই পথের যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। এতে করে ঈদের আগে এই নৌপথে যাত্রীবাহী বাসের চাপ বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন

এ নৌপথে আজ দুপুর পর্যন্ত ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। বাকি দুটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাটুরিয়ায় ভাসমান কারখানায় মেরামতে রয়েছে। এ ছাড়া পাটুরিয়ার পাঁচটি ঘাটের মধ্যে চারটি ঘাট সচল রয়েছে। ২ নম্বর ঘাটে আজকেও পন্টুন স্থাপন করা হয়। সচল চারটি ঘাটের মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটে যাত্রীবাহী বাস, ৫ নম্বর ঘাটে ব্যক্তিগত ও ছোট গাড়ি এবং ১ নম্বর ঘাটে মালবাহী গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে।

যাত্রী ও পরিবহনের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে এ নৌপথে গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সে সময় প্রচণ্ড গরমে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হবে। ফেরির সংখ্যা না বাড়ালে ঈদের আগে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধ থাকায় এবার ঈদে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে।

যানবাহনের এই বাড়তি চাপ সামাল দিতে এবং যাত্রীদের নির্বিঘ্ন পারাপার করতে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ১৯টি ফেরি রয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আরও দুটি ফেরি বহরে যুক্ত হবে। এ ছাড়া আগামী দু–এক দিনের মধ্যে ২ নম্বর ঘাটটিও সচল হবে।