পাটকল বন্ধ করে দেওয়ায় কষ্টে ভরা জীবন

পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মা–বাবা–স্ত্রী–সন্তান নিয়ে অভাবে দিন কাটছে অসীম কুমার সরকারের। আজ দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে আজিজ ফাইবার্স লিমিটেড নামের একটি পাটকলের শ্রমিক সর্দার ছিলেন অসীম সরকার (৪১)। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পাটকলটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর। এখন দিন কাটছে অর্ধাহার–অনাহারে।

আজ শনিবার ফরিদপুর সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে অসীম সরকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছাপরা ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও ছোট্ট দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। কাঁচা ভিতের টিনের ঘরটি এত ছোট যে সবকিছু গাদাগাদি করে রাখা। সংসারে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট।

পাটকলে প্রতিদিন অসীমের মজুরি ছিল ৩২০ টাকা। ছুটির দিন বাদ দিয়ে মাসে পেতেন ৮ হাজার ৩২০ টাকা। ওই টাকায় কষ্ট করে  সংসার চালাতেন। পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অসীমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এক বছর ধরে দুটি গরু পালন ও বর্গাচাষ করে কোনোমতে সংসার চলছে তাঁর।

অসীম সরকার বলেন, ‘কীভাবে যে বাঁইচা আছি তা কইতে পারব না। অভাবে সংসার আর চলে না। এইডারে বাঁইচা থাকা কয় না? পরিবারের লোকদের ভাতের জোগাড় করাটাই কঠিন।’ তিনি বলেন, ওই পাটকলে মোট ৭৫০ শ্রমিক ছিলেন। তিন শিফটের প্রতি শিফটে কাজ করতেন ২৫০ জন। মিলটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে বেশির ভাগ শ্রমিক এখনো বেকার।

ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের মাঝারডাঙ্গী গ্রামের লিপি সরকার (২৫) ওই পাটকলের শ্রমিক ছিলেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি বেকার। স্বামী ও পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে তিনি পড়েছেন বিপদে।

লিপি বেগম বলেন, ‘স্বামী নছিমন চালান। তাঁর আয়ে সংসার চলে না। যত দিন মিলে কাজ করেছি, তত দিন পরিবারে কোনো সমস্যা হতো না। এখন সংসারে অভাব। তিন বেলা ভাত জোটে না।’

বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল আজিজ ফাইবার্স লিমিটেডের গেট
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের চাঁদপুর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে আজিজ ফাইবার্স লিমিটেডের অবস্থান। ১৯৯৭ সালে ৯ দশমিক ৯ একর জমিতে পাটকলটি গড়ে তোলা হয়। এ পাটকলের মালিক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলা নিয়ে বর্তমানে তিনি বিদেশে পলাতক। তাঁর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো এক বছর আগে পাটকলটিও বন্ধ হয়ে যায়। পাটকলটি বর্তমানে দুদকের নজরদারিতে আছে।

ওই পাটকলে পাট সরবরাহ করেছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইদুরদী গ্রামের পাট ব্যবসায়ী মুকুল দাস (৪৬)। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমি ওই পাটকলে পাট দিই। মিলের কাছে আমার পাওনা ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। দুদকের মামলায় পড়ে মালিক বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কবে মিল চালু হবে আর কবে টাকা পাব, তার ঠিক নেই। আমার মতো আরও ২৫ থেকে ২৬ ব্যবসায়ী ওই মিলের কাছে টাকা পান।’

পাটকলটিতে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে কাজ করতেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল কুমার ধর। তিনি বলেন, ‘পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ শ্রমিকদের মতো আমার অবস্থাও শোচনীয়। মাঝবয়সে এসে চাকরি হারালে চাকরি পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ওই মিলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বলে কেউ চাকরিও দিতে চায় না, ভরসা পায় না। সব মিলিয়ে চরম বিপদে আছি।’