পাকুন্দিয়া আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পর মামলা, গ্রেপ্তার ৩
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পর মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করতে গিয়ে দুটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ষাটকাহন এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ওরফে জাফরুল বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে পাকুন্দিয়া থানায় মামলা করেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, সাইফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদের অনুসারী।
সাইফুল ইসলামের মামলায় তাঁর বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, একটি এনজিওর কার্যালয় ভাঙচুর এবং ওই এনজিও কর্মীদের মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। এ মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয় পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিনকে। ফরিদ উদ্দিন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আইনজীবী মো. সোহরাব উদ্দিনের অনুসারী।
বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদে ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের অনুসারীরা প্রতিটি সরকারি দিবস ও আওয়ামী লীগের ছোটখাটো কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষের এ ঘটনায় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের বাহিনীর হামলায় তাঁদের অন্তত ২৯ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুকুল মিয়াসহ দুই-তিনজন গুরুতর আহত। এরপরও প্রতিপক্ষ নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করেছে।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের সময় বাড়িঘরে ভাঙচুর ও কয়েকজনের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে। এদিকে এ ঘটনায় চ্যানেল ২৪-এর সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সময় প্রথম আলোর সাংবাদিক তাফসিলুল আজিজের মোটরসাইকেল ভাঙচুরকারীকেও পুলিশ সন্ধান করছে। তাঁর সন্ধান পাওয়ামাত্রই গ্রেপ্তার করা হবে।
গতকাল বিকেলে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উপজেলার পুলেরঘাট বাজার এলাকা। ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, মারধরের ঘটনায় সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয় সাংবাদিকের মোটরসাইকেলসহ মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২২ জুলাই সাবেক সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের সমর্থকেরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। এর পর থেকে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের অনুসারীরা প্রতিটি সরকারি দিবস ও আওয়ামী লীগের ছোটখাটো কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।