সড়কের পাশে ওয়াসার পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। এই গরমে ঠান্ডা পানি পেয়ে অনেক রিকশাচালক হাতমুখ ধুয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার সেরে নিচ্ছেন রিকশা ধোয়ার কাজও।
একজন রিকশাচালক বলেন, রোববার রাত ১২টায় এখান থেকে যাওয়ার সময় পাইপ ফেটে পানি বের হতে দেখেছেন। এরপর থেকে পানি বের হচ্ছে তো হচ্ছেই। আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘যে পরিমাণে পানি বের হচ্ছে, তাতে একটা বড় দীঘি ভরে যেত। অথচ কারও কিছু এসে যাচ্ছে না! এভাবে ওয়াসার পানির অপচয় মানে আমাদের অপচয়, সরকারের অপচয়।’
রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া ক্যান্টনমেন্ট রাস্তার জিন্নাহ নগর এলাকায় রোববার রাত ১২টার দিকে ওয়াসা লাইনের একটি বড় পাইপ ফেটে যায়। এলাকাবাসী সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু ঘটনার ২০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার রাত ৮টার দিকে পাইপটি সারাতে আসেন ওয়াসার লোকজন। পাইপটি সারাতে আজ রাত ১২টা লেগে যাবে বলে তাঁরা জানান।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরে রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য বুলডোজার দিয়ে মাটি সরাচ্ছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। জিন্নাহ নগর এলাকায় রোববার রাত ১২টার দিকে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছিল। এ সময় ওয়াসার লাইনের বড় পাইপটি ফেটে যায়। এতে এলাকার অনেক বাসার লাইনের পানি চলে যায়। কিছু লাইনে পানির গতি কমে যায়। রাত পেরিয়ে দিন চলে যায়। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির পাইপটি সারাতে আসে না। অবশেষে আজ রাত আটটায় পাইপটি সারাতে আসেন ওয়াসার কর্মীরা।
ওই এলাকার পাশেই খ্রিষ্টানপাড়া এলাকা। ওখানকার রিকশাচালক মাইকেল হাসদা বলেন, তিনি ভোর পাঁচটার দিকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। তখন থেকে দেখেন পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। সারা দিনে তিনি অসংখ্যবার ওই এলাকা দিয়ে গেছেন। দেখেছেন, পানি বের হয়েই যাচ্ছে।
ওয়াসার পানি ব্যবহার করেন ফুয়াদ রোমেল। পাইপ ফেটে যাওয়াতে সারা দিন বাসায় পানির পাননি। তিনি বলেন, গতকাল রাত ১২টার পর পানির পাইপ ফেটে গেল। কিন্তু কেউ সারাতে এল না। এভাবে খরার মধ্যে পানির অপচয় মেনে নেওয়া যায় না।
আজ বিকেলে নগরের তেরখাদিয়ার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাইপ দিয়ে শব্দ করে পানি বের হচ্ছে। রাস্তা ডুবে পানি পশ্চিম পাশের নালায় পড়ছে। পূর্ব পাশ দিয়েও পানি চলে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে অটোরিকশা, গাড়ি চলাচল করছে পানির ওপর দিয়েই। কেউ কেউ রিকশা, সাইকেল থামিয়ে ওই পানিতে হাতমুখ ধুয়ে নিচ্ছেন। একদল কুকুরকেও এই তীব্র দাবদাহে ওই পানিতে নামতে দেখা গেল।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাকীর হোসেন বলেন, ১৮ ঘণ্টা কেন, ১৮ সেকেন্ডও পানি অপচয় করা যাবে না। তিনি বিষয়টি জানেন না। হয়তো তাঁদের প্রকৌশল জানতে পারেন। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এরপর রাত নয়টার দিকে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী (জোন-১) মো. রেজাউল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটার দিকে ওয়াসার কর্মীরা পাইপটি সারাতে ওই এলাকায় গেছেন। আজ রাত ১২টার মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তৎক্ষণাৎ পাইপটি বন্ধ করা গেলে পানির অপচয় রোধ করা যেত—এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সাধারণত সন্ধ্যার পর পানি সরবরাহ বন্ধ করা হয়। এ জন্য রাতে পাইপটি সারাতে লোক পাঠানো হয়েছে।