কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত এখন পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত। সৈকতে নামা অধিকাংশ নারী, পুরুষ-শিশুর মুখে নেই মাস্ক। সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা হচ্ছে না। ফলে করোনার ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজারের অবস্থা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রোববার সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সৈকতের হোটেল মোটেল জোন, কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণি পয়েন্টে অভিযান চালিয়েছেন একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি চালানো হয় স্বাস্থ্যসচেতনতামূলক নানা প্রচারণা। করা হয় মাইকিং। আদালতগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিন আল পারভেজ।
ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো পরিচালনা করেন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু এমং মারমা, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া সুলতানা, সৈয়দ মুরাদ ইসলাম, ইমরান জাহিদ, কাজী মাহমুদুর রহমান এবং মো. রাহাত উজ জামান।
অভিযানে জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং ৩৯ আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা আইনি সহায়তা দেন। জেলা শহরের বাইরে প্রতিটি উপজেলাতেও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করেন।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে শহরজুড়ে তৎপর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ ও পরিত্যক্ত মাস্ক ফেলার ক্ষেত্রে লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে। চালানো হচ্ছে করোনা সংক্রমণ রোধে নানা প্রচারণা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে উদাসীনতার অভিযোগে করা হচ্ছে মামলা ও জরিমানা।
রোববার বিকেলে পরিস্থিতি দেখতে সৈকতে নামেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। সঙ্গে ছিলেন পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিন আল পারভেজসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় মাস্কবিহীন সৈকতে নামা শতাধিক পর্যটককে তাঁরা সতর্ক ও সচেতন করেন।
সৈকতের লাবণি ও কলাতলী পয়েন্টে সমবেত হয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার পর্যটক। তাঁদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা দুই হাজারের মতো। কিন্তু অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। অনেকটা গাদাগাদি করে লোকজন সমুদ্রের পানিতে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিন আল পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৈকতে নামার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে বিধিনিষেধ নেই। তারপরও করোনা সংক্রমণ রোধে আমরা সৈকতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে লোকজনকে সচেতন করে চলেছি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। ক্ষেত্রবিশেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল–জরিমানাও করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, কক্সবাজারকে করোনা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা। রোববার বিকেল চারটা পর্যন্ত চারটি পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা চলমান রাখা হবে।ৎ
একটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার সাদিয়া সুলতানা বলেন, সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটছে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগমে কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই এক সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে শহরব্যাপী সচেতনতামূলক অভিযান চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্রসৈকত ও হোটেল মোটেল জোনে পর্যটনসহ সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ কাপড়ের মাস্ক বিতরণ, পরিত্যক্ত মাস্ক যত্রতত্র না ফেলতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া সৈকতে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এ পর্যন্ত শতাধিক মামলায় জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তার মধ্যে রোববার দুপুর পর্যন্ত ২০টি মামলায় ২টি প্রতিষ্ঠান ও ১৮ জন ব্যক্তিকে ৯ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। গত শনিবার ৩৫টি মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করেই চলেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগসহ স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠন সদস্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসন প্রতিদিন মাইকিং করে সবাইকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত সাত দিনে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছেন অন্তত ১০ লাখ মানুষ। হোটেলে ওঠার সময় তাঁদের করোনা সংক্রমণ রোধ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেলে চলার জন্য সতর্ক করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ পর্যটক সৈকতে নামেন মাস্কবিহীন, সামাজিক দূরত্বও মানেন না।
জেলার সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সর্বশেষ গত শনিবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৩৭৪ জনের নমুনা করে করোনা শনাক্ত হয় ১৭ জনের। এর মধ্যে কক্সবাজার শহরে ১১ জন, রামুতে ৩ জন, উখিয়ায় ১ জন, টেকনাফে ১ জন ও উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা ১ জন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় গত শনিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ১৭৩ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৩ জন। এর মধ্যে ১০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী।