পন্টুনে ব্যাপক কাদা, ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত
তিন দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার প্রতিটি ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কসহ পন্টুন কাদাপানিতে পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে। ফলে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি মাঝেমধ্যে সংযোগ সড়কে গাড়ি বিকল হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ছে। এদিকে ফেরি ও ঘাটস্বল্পতা তো রয়েছেই, এর মধ্যে অতিরিক্ত গাড়ি আসায় এবং বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথ স্বাভাবিক না হওয়ায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, যানবাহন পারাপার ব্যাহত হওয়ায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চার কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে গাড়ির লাইন। দৌলতদিয়ায় চালু থাকা পাঁচটি ঘাটের মধ্যে ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কে কাদার স্তূপ জমে আছে। কাদাপানি মাড়িয়ে যানবাহনের সঙ্গে সাধারণ যাত্রীরা ফেরিতে উঠছেন। ৫ নম্বর ঘাটে ফেরি থেকে নামার পর একটি পণ্যবাহী গাড়ি সংযোগ সড়কে কাদায় আটকে পড়ে। এক ঘণ্টার মতো গাড়িটি সেখানে আটকে ছিল। এ সময় সড়ক দিয়ে অন্যান্য যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারেনি। ফেরিতে ওঠানামার সময় যাত্রীরা সতর্কতার সঙ্গে চললেও মাঝেমধ্যে এক-দুজন পিচ্ছিল খেয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে।
বৈরী আবহাওয়ায় তিন দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় প্রতিটি ঘাট কাদাপানিতে অতিরিক্ত পিচ্ছিল হয়ে গেছে। যে কারণে ফেরিতে গাড়ি দ্রুত ওঠানামা করতে পারছে না।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মো. ইব্রাহিম শেখ বলেন, ‘অতিরিক্ত কাদার কারণে ফেরি থেকে নামার পর সড়কে উঠতে পারছি না। চাকা বারবার স্লিপ কেটে যাচ্ছে। জোরে চালাতে গেলে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি, ওপরে উঠতে পারছি না।’
ট্রাকের সহকারী বাইরে থেকে ইটের আধলা ও কাঠের গুঁড়ি এনে চাকার নিচে দিয়ে ওপরে ওঠানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল। এ সময় ৫ নম্বর ঘাটে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। অবশেষে প্রায় এক ঘণ্টা পর অন্যদের সহযোগিতায় গাড়িটি ওপরে ওঠানো সম্ভব হয়।
কুষ্টিয়া থেকে আসা ঢাকাগামী একটি পরিবহনের চালক আলাল হোসেন বলেন, ‘প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কের কাদার ভেতর লাইন ধরে আছি। কাদাপানির কারণে চাকা ঘুরতে থাকে। কোনোভাবে সরতে পারছিলাম না। অনেক কষ্ট করে উঠতে হচ্ছে। অতি দ্রুত কাদা অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
দুপুর ১২টার দিকে তিন শ্রমিক এসে কেউ কোদাল দিয়ে কাদা টেনে অপসারণের কাজ করছিলেন। আবার কেউ পানি দিয়ে ধোয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় ঘাট দিয়ে যাতায়াতকালে সাধারণ যাত্রীরা অনেক বিড়ম্বনার শিকার হয়। অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে থাকে, ঘাটের সমস্যা যেন কোনো দিনই শেষ হবে না।
৫ নম্বর ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর রাজু হাওলাদার বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় তিন দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় প্রতিটি ঘাট কাদাপানিতে অতিরিক্ত পিচ্ছিল হয়ে গেছে। যে কারণে ফেরিতে গাড়ি দ্রুত ওঠানামা করতে পারছে না। আমরা কাদা অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বৃষ্টি না থাকলে আর সমস্যা হবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।’
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া উভয় ঘাটে অতিরিক্ত কাদায় পিচ্ছিল হওয়ায় গাড়ি ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ফেরি থেকে নামার পর ওই সব গাড়ি সহজে ওপরে সড়কে উঠতে পারছে না। এতে ফেরি লোড-আনলোডে আগের থেকে কয়েক গুণ বেশি সময় লাগছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি থাকলেও সোমবার সকালে যান্ত্রিক ত্রুটিতে রো রো ফেরি শাহজালাল বসে আছে। বর্তমানে সাতটি বড়, ছয়টি ছোট ও দুটি মাঝারি আকারের ফেরি চলাচল করছে। এ কারণে পাটুরিয়ায় প্রায় ৪০০ পণ্যবাহী গাড়িসহ অর্ধশত যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তেও কয়েক শ গাড়ি অপেক্ষায় রয়েছে।