পদ্মা সেতুতে উঠতে না পারায় আক্ষেপ, অন্তত দুই দিনের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি
উদ্বোধনের পর বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুতে উঠতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। আজ শনিবার উদ্বোধনের পর থেকেই দর্শনার্থীরা মাওয়া প্রান্তে এসে জড়ো হতে থাকেন। বিকেলে অপেক্ষার সারি আরও দীর্ঘ হতে শুরু করেছে। তবে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা কাউকে সেতুর ওপর উঠতে দিচ্ছেন না। স্বপ্নের সেতুতে উঠতে না পারায় অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
আজ বিকেল চারটার পর পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে দোগাছি সার্ভিস এলাকা পর্যন্ত হাজার হাজার দর্শনার্থীর ঢল দেখা যায়। একপর্যায়ে দর্শনার্থীরা সেতুর টোল প্লাজায় এসে জড়ো হতে থাকেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তীব্র বাধায় তাঁরা সামনে যেতে পারছেন না। তবে এ সময় অনেক তরুণকে ঝুঁকি নিয়ে সেতুর নিরাপত্তাবেষ্টনী বেয়ে সেতুর ওপরে উঠতে দেখা যায়।
সেতুতে ওঠার জন্য সারা দিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অনেক দর্শনার্থীকে সেতুর মাওয়া প্রান্তে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ সময় প্রায় ৩০ জন দর্শনার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা সবাই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তবে সেতুতে উঠতে না পারার জন্য সবাই আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এ সময় অনেকে আশাহত হয়ে গেছেন সেতু এলাকা থেকে। এর মধ্যে অনেকেই সরকারের কাছে দাবি জানান, অন্তত দুই দিনের জন্য হলেও দর্শনার্থীদের জন্য সেতু উন্মুক্ত করা হোক। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে উঠতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
চম্পা বেগম (৭০) নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। আমি জীবিত অবস্থায় এ সেতু হলো। আনন্দটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আজকে খুব আশা নিয়ে সেতুর ওপরে ওঠার জন্য ঢাকা থেকে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে উঠতে দেওয়া হলো না। বয়সের কারণে প্রায় সময় অসুস্থ থাকি। জানি না কত দিন বাঁচব! সরকারের উচিত ছিল উদ্বোধনের পর অন্তত দুই-তিন দিন সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া।’
ঢাকার ধানমন্ডি থেকে পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে এসেছেন সেলিনা কবির। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় সেলিনা কবির ও তাঁর ছোট সন্তান শিমুলিয়া ঘাটের কাছে স্পিডবোট থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যান। সৌভাগ্যবশত তাঁরা সেবার বেঁচে ফিরেছিলেন। এরপর থেকে তাঁরা গ্রামের বাড়িতে যাতয়াত কমিয়ে দিয়েছিলেন। তবে পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন নদী পাড়ি দিতে আর কোনো ঝুঁকি নেই। তাই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবর শুনে সেলিনা কবির সেতুর মাওয়া প্রান্তে ছুটে এসেছেন। তবে সেতুতে উঠতে না পারায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
সেতুতে ওঠার জন্য মানিকগঞ্জ থেকে আসা মো.কফিল উদ্দিন (৬৫) সকাল থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ঘুরছেন। কিন্তু তিনি সেতুতে উঠতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সের ছেলেরা নিরাপত্তা বেড়া টপকিয়ে সেতুর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা তো সেটা করতে পারি না। আমাদের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দিলে ঘুরে দেখতে পারতাম।’