পদ শূন্য না থাকার পরও শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
রংপুরের পীরগাছার পাঠক শিকড় বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে শিক্ষক থাকার পরেও ওই পদে পত্রিকায় অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্য ও সাধারণ শিক্ষকেরা।
অভিযোগ উঠেছে, ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে শিক্ষক থাকার পরও প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র রায় নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে গোপনে অবৈধভাবে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। এর আগে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর ওই প্রধান শিক্ষক পরিচালনা কমিটির কাউকে না জানিয়ে কম্পিউটার শিক্ষক পদে বিপুল চন্দ্র রায় নামের একজনকে গোপনে নিয়োগ দেন। তা জানাজানি হওয়ার পর পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে ওই কম্পিউটার শিক্ষকের বেতন–ভাতা স্থগিত রাখা হয়।
বিদ্যালয়সূত্রে জানা গেছে, ১২ এপ্রিল ঢাকার একটি দৈনিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান শিক্ষক বরাবর আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদনপত্র পাঠাতে বলা হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের বর্তমানে কর্মরত সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন বলেন, ‘২০০০ সালে এখানে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছি। ২০৩৮ সাল পর্যন্ত আমার চাকরির মেয়াদ আছে। এরপরেও একই পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি একটি পত্রিকায় দেখে আমরা শিক্ষকেরা সবাই হতবাক হয়েছি। প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের জন্য এমনটা করেছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে শিক্ষক থাকার পরেও প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র রায় গোপনে একই পদে অবৈধভাবে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় দিয়েছেন। বিষয়টি পরিচালনা কমিটির কেউই জানতেন না। মূলত প্রধান শিক্ষক ওই পদে শিক্ষক নিয়োগের নামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। বিষয়টি ইতিমধ্যে ইউএনও ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তাঁরা।
এমদাদুল হক আরও অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক এর আগেও কম্পিউটার শিক্ষক পদে গোপনে একজনকে নিয়োগ দিয়ে এমপিও শিটে তাঁর বেতন পর্যন্ত করিয়েছেন (ইনডেক্স নম্বর ১১৪৪০৭৬)। অবশ্য ওই শিক্ষকের বেতন–ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র রায় দাবি করে বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নাজমা খাতুন নামের একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেলে বেতন–ভাতা পাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই সবকিছু করা হয়েছে। কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই নিয়োগও ম্যানেজিং কমিটি দিয়েছিল। পরে পরিচালনা কমিটির সভাপতি অভিযোগ করায় ইউএনওর নির্দেশে কম্পিউটার শিক্ষকের বেতন–ভাতা প্রদান স্থগিত রয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সুজা মিয়া বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে শিক্ষক থাকার পরেও পত্রিকায় একই পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই শিক্ষকের বেতন–ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে। এ বিষয়েও তদন্ত চলছে।